বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা। যাত্রাবাড়ী, শান্তিনগর, নতুন বাজার, কুড়িল বিশ্বরোড, উত্তরা, আফতাবনগর, বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, মিরপুর-১০, সায়েন্সল্যাব, ও শহীদ মিনারে বিক্ষোভ করছেন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। শিক্ষার্থীদের মুহুর্মুহু স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা।
আজ শনিবার সকাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন তারা।
কর্মসূচিতে যোগ দিতে দলে দলে শিক্ষার্থীরা এসে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিচ্ছেন। এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ছাত্র-জনতা। এসময় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে চারিদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। কোথাও এতটুকু জায়গা ফাঁকা নেই। খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের জড়ো হচ্ছেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে শহীদ মিনার।
‘আওয়ামী লীগের কবর দে, সারা বাংলায় খবর দে’, ‘আবু শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘আওয়ামী লীগের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘২৪ এর রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘কে কে রাজাকার হাসিনা হাসিনা’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন তারা।
সকাল সাড়ে ১১টা থেকে যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন রাস্তার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা একযোগে ৯ দফা দাবি আদায়ে স্লোগান দেয়। সেখানে কোনো পুলিশ সদস্যের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়নি।
বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘৯ দফা আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। দেশজুড়ে আমাদের ভাই-বোনদের হত্যা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
আফতাবনগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচিতে অংশ নিতে জড়ো হয়েছেন কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে রামপুরার আফতাবনগরের জড়ো হন তারা। এ সময় ব্যাপক পুলিশ সদস্যের অবস্থানও লক্ষ্য করা যায়। কয়েক হাজার শিক্ষার্থী রাজধানীর বাড্ডা রামপুরা সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। এ সময় বাড্ডা থানার অর্ধশতাধিক পুলিশ রাস্তা থেকে সরে গেছে।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইউআইটিএস ও সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অংশ নিয়েছেন। বেলা দেড়টার দিকে অন্তত ৩ হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়েছেন এই বিক্ষোভ সমাবেশে। শিক্ষার্থীরা একযোগে ৯ দফা দাবি আদায়ে স্লোগান দিচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘নয় দফা আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না। দেশজুড়ে আমাদের ভাই-বোনদের হত্যা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
বনশ্রী বি ব্লকের সামনে আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থী অভিভাবকরা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগন দিতে থাকেন। এছাড়া সায়েন্সল্যাবে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ নানা স্লোগান দিচ্ছেন তারা। সায়েন্স ল্যাব মোড়ে সকাল থেকে অনেক পুলিশ সদস্যকে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন। পরে দুপুর ১টার দিকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্রে করে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণ করে ‘আমার ভাই মরল কেন’সহ বিভিন্ন শ্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।
উল্লেখ্য, সারাদেশে আজ শনিবার বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ৮টার দিকে ফেসবুক লাইভে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান।
একইসঙ্গে আগামীকাল রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন তারা। ‘সারাদেশে ছাত্র-নাগরিকের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও ৯ দফা’ দাবিতে এই কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
আরও পড়ুন:
প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান