বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমিছিল কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে খুলনা নগরী। আজ শুক্রবার বিকেলে খুলনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির দফায় দফায় সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়েছে। এ সময় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আর এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন।
খুলনার জিরো পয়েন্ট ও গল্লামারী মোড় এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আজ বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যার পর থেকে পুরো নগরীতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, গুলিবিদ্ধ ২৫ জন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ২০ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ও অন্যদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতদের মধ্যে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ছাত্র শফিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আফরান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফাইয়াজ, নর্থ ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাফিদ, সেন্ট যোসেফ স্কুলের ছাত্র মুগ্ধ, খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ইউসুফ, স্কুলছাত্র জাহিদুল (১৫), মাদ্রাসাছাত্র সৌরভ (১৩), রনির (২০) ও নীরবের (২১) নাম জানা গেছে।
এ ছাড়া আহতদের মধ্যে ছাত্রীও রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত বিক্ষোভকারীদের অ্যাম্বুলেন্সে করে শহরের দিকে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে অসংখ্য টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা নগরীর গল্লামারী এলাকায় পুলিশের একটি পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেয়। বেশ কিছু দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের কর্মসূচি ছিল মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে শিববাড়ী মোড় গিয়ে সমাবেশ করা। কিন্তু মিছিল নিয়ে শহরে ঢোকার আগেই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের অবরুদ্ধ করে ফেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ১০-১৫ সেকেন্ড পরপর পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থানরত বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে।
জানতে চাইলে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শুধু টিয়ারশেল ব্যবহার করেছি।
এর আগে, দুপুরে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভকারীরা শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হলে পুলিশের তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। পরে বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল হয়ে গল্লামারীর দিকে যায়।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ টিয়ারশেল ছুঁড়লে ও লাঠিচার্জ করলে প্রায় কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীদের একটি বড় অংশ তখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও সংলগ্ন সড়কে অবস্থান নেয়। আর সেসময় পুলিশ অবস্থান নেয় গল্লামারী ব্রিজে।
এরপর থেকে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে অনবরত টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে এবং বিভিন্ন দিক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে অবস্থান নেয়। এতে একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী।
আরও পড়ুন:
হবিগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ, নিহত ১
উত্তরায় পুলিশ-আ.লীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, দুজন গুলিবিদ্ধ