রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৩১ জুলাই, ২০২৪ ১২:০৬ : অপরাহ্ণ
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এখনো গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আরও তিন শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া গেছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের। এ নিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন গত ১৪ দিনে।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের টানা বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয় ১ জুলাই। গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারা দেশে।
এর পরদিন থেকে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, নাশকতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন জায়গায় এসব ঘটনায় মামলা হচ্ছে একের পর এক। তার মিলিয়ে বাড়ছে গ্রেপ্তারের সংখ্যাও। সব মিলিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৪ দিনে সারা দেশে মোট ১০ হাজার ৪৩১ জন গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া গেছে।
ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের একটি বড় অংশ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং দল দুটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। এ ছাড়া বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তারদের মধ্যে বিশাল একটি অংশেরই পাওয়া যাচ্ছে না কোনো রাজনৈতিক পরিচয়।
ঢাকার আদালত সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকায় ২৭০টি মামলায় ২ হাজার ৮৯১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক হিসাব বলছে, গত সোমবার পর্যন্ত রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ২৪৩টি মামলায় মোট ২ হাজার ৬৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৮৪ জনেরই কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি, যা মোট গ্রেপ্তারের ৮৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ কোনো দলের সঙ্গে তাঁদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মী আছেন ২৬৯ জন, জামায়াতের ৬৩ এবং শিবিরের আছেন ১০ জন। এ ছাড়া গণ অধিকার পরিষদের ৩ এবং জেপির আছেন ১ জন, যা মোট গ্রেপ্তারের ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ।
পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, যারা নাশকতা-সহিংসতার সঙ্গে জড়িত, শুধু তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
রাজধানীর বাইরে ঢাকার ধামরাই, সাভার, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহার থানায় গতকাল পর্যন্ত মামলা হয়েছে ২৩টি। এসব স্থানে গতকাল একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সব মিলে এসব থানার অধীন গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৬৭ জন।
সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জে আরও ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় সেখানে আরও একটি নতুন মামলা হয়েছে। এ নিয়ে ৩০টি মামলায় নারায়ণগঞ্জে মোট ৫৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাজীপুরে অবশ্য নতুন করে কোনো মামলা হয়নি। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৪ জনকে। এ নিয়ে গাজীপুরে মোট ৪২টি মামলায় ৪৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় নতুন দুই মামলাসহ ৩৩ মামলায় গতকাল আরও ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই বিএনপির নেতাকর্মী। এ নিয়ে মহানগর ও জেলায় মোট ১ হাজার ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফেনীতে বিএনপির আরও তিন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে ফেনী সদর মডেল থানায় করা ২টি বিস্ফোরক দ্রব্য ও নাশকতার মামলায় মোট ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নোয়াখালীতে পুলিশের অভিযানে শেষ ২৪ ঘণ্টায় বিএনপি ও জামায়াতের আট নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে মামলা ও গ্রেপ্তার তুলনামূলক বেশি হচ্ছে রাজশাহী, রংপুর ও বগুড়ায়। এর মধ্যে রাজশাহী মহানগর ও জেলা মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৭টি মামলা হয়েছে। সেখানে নতুন করে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজশাহীতে এ নিয়ে মোট গ্রেপ্তার ৪০৩ জন। বগুড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ জেলায় ১৫টি মামলায় গতকাল পর্যন্ত ১৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রংপুরে নতুন করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭ জনকে। রংপুর মহানগর ও জেলা মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত ২২টি মামলায় ২৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিলেটে ১১ মামলায় গতকাল পর্যন্ত মোট গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৪৭ জন, এর মধ্যে শেষ ২৪ ঘণ্টায় চারজন।
এছাড়া খুলনা বিভাগের কোথাও কোটা আন্দোলন ঘিরে নতুন কোনো মামলার খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় বাগেরহাটে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫২ জন। যশোরে এ পর্যন্ত মোট গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৩৭ জন। এর মধ্যে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হয়েছেন ২২ জন।
আরও পড়ুন:
মানবাধিকার লঙ্ঘন: ম্যান্ডেট দিয়ে পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত জাতিসংঘ
বাংলাদেশে বেআইনি হত্যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের গভীর উদ্বেগ