মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ৩০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

স্বেচ্ছায় অবসরে যাচ্ছেন ছাগলকাণ্ডের সেই মতিউর


রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান।

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই ২০২৪, ২:০৪ অপরাহ্ণ

ছাগলকাণ্ডে সমালোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমানকে অবশেষে অবসরে পাঠানো হচ্ছে। তবে মতিউর রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে অবসরে পাঠাচ্ছে সরকার। আগামী ২৯ আগস্ট তার অবসর কার্যকর হবে।

আজ বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

আইআরডির একটি সূত্রে জানা গেছে, আত্মগোপনে (পলাতক) থাকা অবস্থায় তিনি অবসরের আবেদন করেন।

আইআরডির উপসচিব মকিমা বেগম স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ৩৩ (১) ও ধারা ৫১ অনুসারে আগামী ২৯ আগস্ট থেকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো। তবে অবসরজনিত আর্থিক সুবিধা (অবসর উত্তর ছুটি, ল্যাম্প গ্র্যান্ট, পেনশন) পাবেন না মতিউর।

এদিকে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা চলছে।

ছাগলকাণ্ডের পর মতিউর রহমানের অবৈধ সম্পদ অর্জনের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর জুলাই মাস থেকেই তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

এবার কুরবানির ঈদে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ‘সাদিক এগ্রো’ ফার্ম থেকে এগ্রো বিটল প্রজাতির খাসি ১৫ লাখ টাকায় কিনে আলোচনায় আসেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক যুবক। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গুঞ্জন ওঠে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে। রাজস্ব কর্মকর্তা বাবার দুর্নীতির টাকায় তিনি ১৫ লাখ টাকায় খাসিটি কিনেছিলেন।

 

এ ঘটনায় ওই ছেলে ও তার বাবাকে নিয়ে ফেসবুকে চলে বিস্তর সমালোচনা। বিভিন্ন পোস্ট ও কমেন্টে খাসির ক্রেতা যুবকের বাবার দুর্নীতি নিয়ে তদন্তের দাবি উঠে। তবে আলোচনা শুরুর পর ইফাতকে ছেলে হিসেবে অস্বীকার করেন মতিউর রহমান।

এ বিষয়ে মতিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ইফাত নামে আমার কোনো ছেলে নেই। এমনকি আত্মীয় বা পরিচিতও নন। আমার একমাত্র ছেলের নাম তৌফিকুর রহমান। একটি গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।

তবে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী জানান, ইফাত তার মামাতো বোনের সন্তান। আর মতিউর রহমানই তার বাবা।

এরপর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন ছাড়াও মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

আলোচিত মতিউর রহমানের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য অনুসন্ধানে গত ২৩ জুন তিন সদস্যের টিম গঠন করে দুদক।

গেল ২ জুলাই মতিউর ও তার দুই স্ত্রী এবং ২ সন্তানের সম্পদের বিবরণ জমা দিতে নোটিশ দিয়েছিল দুদক। এর আগে ৩০ জুন মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পদের খোঁজে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে নথিপত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছিল দুদক। অনুসন্ধান পর্যায়ে গত ১১ জুলাই মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী সন্তানদের ১১৬টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ২৩৬৭ শতাংশ জমি ও ৪টি ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। তার আগে গত ৪ জুলাই মতিউর ও তার স্ত্রী সন্তানদের ১০১৯ শতাংশ জমি ও ৪টি ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দেন আদালত।

এদিকে মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী-সন্তানের বিপুল সম্পদের তথ্য গণমাধ্যমে প্রচার হলে টনক নড়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের। এনবিআর থেকে তাকে সরিয়ে সংযুক্ত করা হয় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে। অভিযোগ অনুসন্ধান করতে কাজ শুরু করে সেন্ট্রাল ইন্টলিজেন্স সেল (সিআইসি)। তথ্য যাচাইয়ে কর অঞ্চল থেকে মতিউর পরিবারের ৫ সদস্যের আয়কর নথি তলব করেন গোয়েন্দারা।

আরও পড়ুন: থেমে গেছে সেই মতিউরের বিরুদ্ধে এনবিআরের অনুসন্ধান

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর