রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :২৯ জুলাই, ২০২৪ ২:৪৫ : অপরাহ্ণ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে খাওয়ানোর ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে জাতির সঙ্গে মশকরা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট।
অবিলম্বে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজত থেকে মুক্তির ব্যাপারে আজ সোমবার হাইকোর্টে রিট করেছেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী। রিটের শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত এই মন্তব্য করেন।
সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা এ রিট দায়ের করেন। আবেদনে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালাতেও আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মেহেদী হাসান চৌধুরী আদালতকে বলেন, ‘আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা দিতে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। টিভিতে দেখানো হয়েছে তাদেরকে ডিনার করানো হচ্ছে। তারা ডিবি কার্যালয়ে কাঁটা চামচ দিয়ে খাচ্ছেন এই ছবি প্রকাশ হয়েছে।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, ‘ডিবি অফিসে যাকে তাকে ধরে নিয়ে যাবেন, তারপর খাবার টেবিলে বসাবেন। ধরে নিয়ে এসে খাওয়ার টেবিলে বসাতে পারেন না। এভাবে জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না।’
গতকাল রোববার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে ডিনার করার কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ। এ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ক্যাপশনে হারুন লিখেছেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাই ওদের ডিবি কার্যালয়ে এনে তাদের সঙ্গে কথা বললাম। কী কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে! ওদের কথা শুনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের নানা পরিকল্পনার কথা জানানোর পর তাদের উদ্বেগ দূর হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টিম ডিবি ডিএমপি বদ্ধপরিকর।’
এর আগে ডিবি কার্যালয়ে হেফাজতে থাকা অবস্থায় গতরাতে এক ভিডিও বার্তায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক।
ওই ভিডিও বার্তায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম-বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে দেখা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন আরেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের।
তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সমন্বয়কদের জিম্মি করে নির্যাতনের মুখে যে স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে, সেটা কখনোই জাতির নিকট গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আটককৃত সমন্বয়করা ভয়ভীতির মুখে গোয়েন্দা সংস্থার লিখে দেওয়া যে বক্তব্য কেবল রিডিং পড়ে গেছে, আমরা সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি এবং একইসঙ্গে জোরপূর্বক বক্তব্য আদায় করার মতো সরকারের এমন জঘন্য কাজের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাতজন সমন্বয়ককে গত তিন দিনে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
অন্যরা হলেন-আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, নুসরাত তাবাসসুম (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল শাখার সমন্বয়ক) ও আরিফ সোহেল (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক)। ভিডিও বার্তায় আরিফ সোহেল ছাড়া অন্য ছয় সমন্বয়ককে দেখা গেছে।
গত শুক্রবার বিকেলে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে সেখানে চিকিৎসাধীন নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদের সঙ্গে আবু বাকেরকে তুলে নিয়ে আসেন সাদাপোশাকের একদল ব্যক্তি। পরে ডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, তিন সমন্বয়কের নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদের মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে।
এরপর গতকাল শনিবার সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে নিজেদের কার্যালয়ে নিয়ে আসে ডিবি। আজ সকালে আনা হয় নুসরাত তাবাসসুম ও আরিফ সোহেলকে।
আরও পড়ুন: ডিবি হেফাজতে থেকে ভিডিও বার্তায় কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা ৬ সমন্বয়কের