রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৪ জুলাই, ২০২৪ ১১:১৭ : পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর এক মন্তব্যে তোলপাড় চলছে। এ নিয়ে দিল্লির দ্বারস্থ হয়েছে ঢাকা। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নোট পাঠিয়ে তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
গত ২১ জুলাই কলকাতার এক জনসভায় মমতা ব্যানার্জী বলেছিলেন, ‘আমি বাংলাদেশ নিয়ে কোনো কথা বলতে পারি না কারণ ওটা একটা আলাদা দেশ। যা বলার ভারত সরকার বলবে। কিন্তু আমি এটুকু বলতে পারি যে, অসহায় মানুষ যদি বাংলার দরজায় খটখটানি করে আমরা তাদের আশ্রয় নিশ্চয়ই দেবো। তার কারণ এটা ইউনাইটেড নেশনসের একটা রেজলিউশন আছে যে কেউ যদি রিফিউজি হয়ে যায় তাকে পার্শ্ববর্তী এলাকা সম্মান জানাবে।’
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী আরও বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে আমরা যেন কোনো প্ররোচনা, উত্তেজনায় না যাই। আমাদের সহমর্মিতা, আমাদের দু:খ, সে যারই রক্ত ঝড়ুক, তাদের জন্য আছে। আমরা দুখী, আমরাও খবর রাখছি। ছাত্রছাত্রীদের মহান প্রাণ, তাজা প্রাণগুলো চলে যাচ্ছে।’
সেদিনই বিকেলে মমতা ব্যানার্জী একটি টুইট করেন, যাতে লেখা হয়-‘বাংলাদেশ থেকে কয়েকশো ছাত্র এবং অন্যান্যরা পশ্চিমবঙ্গ আর ভারতে ফিরে আসছেন। আমি রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি যাতে তাদের সব রকম সাহায্য সহযোগিতা করা হয়।’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ‘বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরছে’-এমন টুইট প্রসঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তার (মমতা) প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে বলতে চাই, তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার, ঘনিষ্ট ও উষ্ণ। কিন্তু তার (মমতা ব্যানার্জী) এই বক্তব্যে বিভ্রান্তির সুযোগ রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে ভারত সরকারকে নোট পাঠিয়েছি।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে ওই নোট পাঠানো হয়েছে। তবে দিল্লি থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায় নি।
মমতা ব্যানার্জীর ওই মন্তব্যে বিজেপি কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। এখন বাংলাদেশ সরকারও বলছে যে তার ওই ভাষণের ফলে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়াতে পারে।
তবে তৃণমূল কংগ্রেস বলছে যে, মমতা ব্যানার্জী ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কথাই বলতে চেয়েছিলেন সেদিন।
দলের অন্যতম মুখপাত্র মনোজিত মণ্ডল বলছিলেন, ‘এর মধ্যে বিভ্রান্তির কোনো জায়গা নেই। একেবারেই এরকম কোনো কথা তিনি বলেননি যে যারা আসতে চাইছেন, চলে আসুন ইত্যাদি। তিনি যেটা বলেছিলেন যে অনেকেই যারা ওখানে পড়তে গেছে, তারা হয়তো ভয় পাচ্ছে, তাদের কেউ যদি এখানে আশ্রয় নিতে চায়, সেক্ষেত্রে যে আন্তর্জাতিক চুক্তি আছে, সেই অনুযায়ী হবে। তবে তিনি এটাও বলেছিলেন যে, তিনি একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তাই বাংলাদেশ নিয়ে তিনি বিশেষ কিছু বলতে চান না। এটা একটা মানবিক আবেদন ছিল, বাঙালী-বাংলা ভাষার আবেগ থেকে তিনি বলেছিলেন কথাটা।’
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকেও আমি বলবো যে, কোনো বিভ্রান্তির জায়গা নেই। মমতাদি একটা মানবিক আবেদন করেছেন এবং সেটাও ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে যারা সত্যিই সেখানে সাফার করছে।’