বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

আন্দোলন-সহিংসতা পেরিয়ে কোটা সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন



রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :২৪ জুলাই, ২০২৪ ১১:৪৩ : পূর্বাহ্ণ

সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের চাকরির বিদ্যমান কোটা পদ্ধতিতে এ সংশোধন আনা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি, নারী ও জেলা কোটা বাতিল করা হয়েছে।

আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে গতকাল (২৩ জুলাই) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ প্রজ্ঞাপন জারি করে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, অর্থাৎ সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল গ্রেডে নিম্নরূপভাবে কোটা নির্ধারণ করা হলো।

মেধাভিত্তিক ৯৩%
মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫%
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ১%
শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১%

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নির্ধারিত কোটায় যাগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে শূন্য পদ সাধারণ মেধা তালিকা থেকে পূরণ হবে।

কোটা নিয়ে এর আগে জারি করা সকল প্রজ্ঞাপন, পরিপত্র, আদেশ, নির্দেশ, অনুশাসন রহিত করা হয়েছে।

এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল মঙ্গলবার বিকালে গুলশানে এক ব্রিফিংয়ে কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির কথা জানান।

জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতও উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।

এই প্রজ্ঞাপন জারির প্রেক্ষাপট, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং সরকারের অবস্থান তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমরা আমাদের কথা রেখেছি, এই প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে।”

এর আগে, গত ২১ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই শিক্ষার্থীর করা আপিল শুনানি করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ কোটার নতুন বিন্যাস ঠিক করে রায় দেন।

রায়ে বলা হয়, “এই নির্দেশনা ও আদেশ প্রদান সত্ত্বেও সরকার প্রয়োজন ও সার্বিক বিবেচনায় এই আদালত কর্তৃক নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে।”

এর আগে আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে দেওয়া পরিপত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা তুলে দিয়েছিল সরকার। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির (১৩তম থেকে ২০তম গ্রেড) গ্রেডে ৫৬ শতাংশ পদে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ ছিল।

কিন্তু এক রিট মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গত জুন মাসে ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে কোটা ফিরিয়ে আনার রায় দেয়।

এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আন্দোলনে নামলে দেশজুড়ে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা ঘটে; ঢাকার কয়েক স্থানে নজিরবিহীন নৈরাজ্যের মধ্যে জারি করা হয় কারফিউ।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫৬ শতাংশ পদে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা ছিল।

ওই বছর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারীরা। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাদ দেওয়া ছিল তাদের মূল দাবি। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব কোটা বাতিলের অনুশাসন দেন।

পরে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে এখনো ৫৬ শতাংশ কোটা বহাল থাকে। এবার এ দুই শ্রেণিতেও ৭ শতাংশ কোটা নির্ধারিত হলো।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর