রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :২৪ জুলাই, ২০২৪ ১:২৬ : অপরাহ্ণ
কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেছেন, চার দফা পূরণ হলেই কেবল তাদের মূল আট দফা দাবি নিয়ে আলোচনার পথ তৈরি হবে। কিন্তু সরকার চার দফা না মানলে আট দফা দাবি নিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। এ সময় চার দফা ‘জরুরি দাবি’ পূরণে সরকারকে আরও দুই দিনের আলটিমেটাম দেন তারা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার সমন্বয়ক গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন।
এই সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনের সড়কে পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান করছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সহ-সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে তাদের বক্তব্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লুঙ্গি পরে এসেছিলেন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, তাকে তুলে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্যাতন করেছে।
গত ১৯ জুলাই থেকে নিখোঁজ সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের বাবা বেলাল হোসেনও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে চার দফা আবার তুলে ধরেন সমন্বয়কেরা। প্রথম দুটি দাবি হচ্ছে ইন্টারনেট সচল করা ও কারফিউ প্রত্যাহার করা। তৃতীয় দাবিটি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরিয়ে নিয়ে সরকার ও প্রশাসনের সমন্বয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে আবাসিক হল খুলে দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করা। চতুর্থ দাবি হচ্ছে আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এসব দাবি মানতে গত রোববার রাতে সমন্বয়কেরা সরকারকে দুই দিনের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। এর আগে গত শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সরকারের তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তারা আট দফা দাবি জানিয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে আট দফা দাবি জানিয়ে এসেছিলাম। এরপর দুই দিন আগে জরুরি চারটি দাবি জানিয়ে এসেছি। এই চারটি দাবি পূরণ না করলে বাকি আটটি দাবি নিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। আমরা দুই দিনের আলটিমেটাম দিলেও এখনো এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাইনি। আমরা আবার দুই দিনের একটি আলটিমেটাম দিচ্ছি ওই চারটি জরুরি দাবি মানার জন্য। আমরা চাই, বৃহস্পতিবারের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা হোক, যাতে শুক্রবার সব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা ফিরে যেতে পারেন। আমরা কবে আন্দোলনের শেষ ঘোষণা করবো, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে সরকারের ওপর।’
সারজিস আলম বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সরকারের যে মনোভাব এখন দেখা যাচ্ছে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী যে ধরনের সংবেদনশীল বক্তব্য দিচ্ছেন, এগুলো আগে বললে এটা কখনোই এ পর্যন্ত আসার কথা ছিল না। অসংখ্য পরিবারের যে ক্ষতিগুলো হয়ে গেলো, সেগুলো আসলে কখনো পূরণ করা সম্ভব নয়।
প্রতি মুহূর্তে গ্রেপ্তার, তুলে নেওয়া ও শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের ভয়ে আছেন বলেও জানান সারজিস আলম।
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কার করে সরকার প্রজ্ঞাপন দেওয়ার বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সরকার প্রজ্ঞাপন (কোটা সংস্কারের বিষয়ে) দিয়েছে। কিন্তু আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও কোটা যাঁরা পান, তাঁরা কোটাব্যবস্থার একেকজন অংশীজন। সেই অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা-সংলাপ ছাড়া এ ধরনের প্রজ্ঞাপন সমীচীন নয়। আমরা চেয়েছিলাম সংলাপের মাধ্যমে সব পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে একটি প্রজ্ঞাপন হবে, যাতে নতুন করে আর কখনো সমস্যা তৈরি না হয়। সংলাপের যথাযথ পরিবেশ তৈরি করে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে কোটা সংস্কারের চূড়ান্ত সমাধান আমরা চাই। আমরা সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটাব্যবস্থার কথা বলেছিলাম, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটার কথা বলেছিলাম। এই বিষয়গুলো প্রজ্ঞাপনে প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিষয়টির আরও ক্লারিফিকেশন (ব্যাখ্যা) দরকার এবং অংশীজনদের সঙ্গে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সংলাপ প্রয়োজন।’
এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, সরকার এই প্রজ্ঞাপন দিতে যত রক্ত মাড়িয়েছে, যত লাশ পড়েছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত। এর জবাব চান তারা।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদকে ১৮ জুলাই থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। আসিফের বাবা মো. বিল্লাল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পত্রিকায় আসিফের গুমের খবর দেখে কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে আজ (মঙ্গলবার) ঢাকায় এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে তালাশ করেছি। তাকে পাই নাই। এখন আমার একটাই আবদার, আসিফের সন্ধান চাই।’
আরও পড়ুন: আন্দোলন-সহিংসতা পেরিয়ে কোটা সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন