কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউন (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর বাড্ডা, আবতাবনগর, উত্তরা-আজমপুরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ৭ জন নিহত হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে এসব নিহতের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বহু আহত হয়েছেন।
উত্তরা-আজমপুর
উত্তরা-আজমপুর এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত চারজন নিহত হয়েছেন। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট মিজানুর রহমান বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আহত হয়ে ৫০ জনেরও বেশি হাসপাতালে এসেছেন। তাদের মধ্যে চারজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্যও আছেন।
আফতাবনগর
রাজধানীর আফতাবনগরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিতে এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকাল ২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই শিক্ষার্থীর নাম শরীফ হাসান। সে রাজধানীর ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজের ছাত্র। তার বাবার নাম জিল্লুর রহমান। তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়, আবতাবনগরে একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। নিহতের বাবা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাড্ডা-রামপুরা
রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় পুলিশ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাতে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম দুলাল মাতবর। তিনি পেশায় ড্রাইভার। সংঘাতের সময় তিনি একটি হাইএস গাড়ি চালিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন। সংঘর্ষে আহত হওয়ার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশংকাজনক অবস্থায় তাকে ফরাজি হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রুবেল হোসেন নিহতের বিষয়টি জানিয়েছে। তিনি বলেন, নিহতের বুকের কাছে একটি গোল ক্ষত চিহ্নিত রয়েছে। তবে এটি বুলেটের ক্ষত কি না, তা এখনো নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, সারা দেশে আজ বৃহস্পতিবার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। গতকাল বুধবার রাত ৮টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
মোহাম্মদপুর
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজ নিহত হয়েছেন। আন্দোলনের সময় ধানমনণ্ডির রাপা প্লাজার কাছে আহত হন এই কিশোর। তাকে উদ্ধার করে সাত মসজিদ রোডের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে মারা যান তিনি।
এ পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে এ নিয়ে ১৪ জনের মৃত্যু হলো। গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে গুলিতে সিয়াম (১৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এর আগে গত ১৬ জুলাই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় ৩ জন, ঢাকা কলেজের সামনে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ২ জন এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন:
সাভারে গুলিতে আরও এক শিক্ষার্থী নিহত
উত্তরায় গুলিতে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থী নিহত
কমপ্লিট শাটডাউন: ঢাকার রাজপথ এখন শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে
রামপুরা-বাড্ডা সড়ক রণক্ষেত্র, ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে আগুন
সারাদেশে চলছে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, প্রায় যানবাহনশূন্য সড়ক
ঢাকার সঙ্গে সব জেলার যোগাযোগ বন্ধ, টার্মিনাল থেকে ছাড়ছে না কোনো বাস