রাজধানীর উত্তরায় পুলিশ-র্যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংঘর্ষে আরও শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছের। যার মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কা জনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ মেডিক্যালের চিকিৎসক ডা. রুকনুজ্জামান।
নিহত শিক্ষার্থীদের নাম এখনো জানা যায়নি। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে এ নিয়ে ৯ জনের মৃত্যু হলো।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে উত্তরায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের উত্তরা অংশে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
উত্তরায় সংঘর্ষের সময় সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ ও র্যাব। আন্দোলনকারীরা হাউজ বিল্ডিং থেকে রাজলক্ষী মোড় পর্যন্ত সড়কে অবস্থান করছেন।
এর আগে, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা উত্তরার জমজম টাওয়ারের সামনে জড়ো হন। পরে তারা মিছিল নিয়ে মূল সড়কে উঠতে চাইলে পুলিশ ও র্যাব তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরে সংঘর্ষ শুরু হয়।
উল্লেখ্য, সারাদেশে আজ বৃহস্পতিবার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। গতকাল বুধবার রাত ৮টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
উল্লেখ্য, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গত ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন-‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এতো ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’
প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা ধরে নিয়েছেন ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তাদেরকেই বলা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে ওই দিন মধ্যরাত থেকে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
এরপর ১৫ জুলাই দুপুর থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
১৬ জুলাই শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে আসে। দুপুরের পর থেকে ঢাকার সায়েন্সল্যাব এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।। সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৩ জন, ঢাকায় ২ জন এবং রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থী নিহত হন। গতকাল বুধবার (১৭ জুলাই) রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভারে গুলিতে এক যুবক মারা যান। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে এ নিয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন:
কমপ্লিট শাটডাউন: ঢাকার রাজপথ এখন শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে
রামপুরা-বাড্ডা সড়ক রণক্ষেত্র, ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে আগুন
সারাদেশে চলছে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, প্রায় যানবাহনশূন্য সড়ক
ঢাকার সঙ্গে সব জেলার যোগাযোগ বন্ধ, টার্মিনাল থেকে ছাড়ছে না কোনো বাস