রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১৮ জুলাই, ২০২৪ ৩:০৩ : অপরাহ্ণ
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকার আলোচনায় বসতে রাজি আছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যখনই রাজি হবেন তখন এ আলোচনা হবে। আজ বিকেলেই বৈঠকটি হতে পারে বলে জানান তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি গণমাধ্যমকে এ কথা জানান।
আনিসুল হক বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যখনই আলোচনায় বসতে রাজি হবেন তখন এ আলোচনা হবে। এ বিষয়ে তাকে এবং শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, তাদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী আলোচনার জন্য আমাকে; আইনমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা তাদের সঙ্গে বসবো এবং আমরা এটাও বলতে চাই যে, তারা যখনই বসতে রাজি হবে, আমরা সেটা যদি আজকে হয়, আজকেই বসতে রাজি আছি।
আনিসুল হক বলেন, দ্বিতীয়ত প্রধানমন্ত্রী আমাকে ঘোষণা দিতে বলেছেন যে, আগামী ৭ আগস্ট যে মামলা শুনানির কথা ছিল, সেই মামলার শুনানি এগিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা নিতে। আমি সেই মর্মে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছি যে, আগামী রোববার তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগে আবেদন করবেন। যাতে মামলাটার শুনানির তারিখ তারা এগিয়ে আনেন।
শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে এ পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হলো। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের বিচারপতি খন্দকার দিলীরুজ্জামানকে দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, সারাদেশে আজ বৃহস্পতিবার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। গতকাল বুধবার রাত ৮টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
উল্লেখ্য, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গত ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন-‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এতো ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’
প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা ধরে নিয়েছেন ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তাদেরকেই বলা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে ওই দিন মধ্যরাত থেকে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
এরপর ১৫ জুলাই দুপুর থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
১৬ জুলাই শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়ে।
পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে আসে। দুপুরের পর থেকে ঢাকার সায়েন্সল্যাব এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৩ জন, ঢাকায় ২ জন এবং রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থী নিহত হন। গতকাল বুধবার (১৭ জুলাই) রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভারে গুলিতে এক যুবক মারা যান। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে এ নিয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন:
উত্তরায় গুলিতে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থী নিহত
কমপ্লিট শাটডাউন: ঢাকার রাজপথ এখন শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে
রামপুরা-বাড্ডা সড়ক রণক্ষেত্র, ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে আগুন
সারাদেশে চলছে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, প্রায় যানবাহনশূন্য সড়ক
ঢাকার সঙ্গে সব জেলার যোগাযোগ বন্ধ, টার্মিনাল থেকে ছাড়ছে না কোনো বাস