রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:৫৪ : অপরাহ্ণ
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
এর আগে, সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে রেজিস্ট্রার ভবনে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের প্রথম দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও, কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ওই বৈঠক শেষ হয়। পরবর্তীতে উপাচার্যের বাসভবনে দ্বিতীয় দফার বৈঠকে আসে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত।
এরইমধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কয়েকটি হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে হল কর্তৃপক্ষ। ছাত্র রাজনীতি আর থাকবে না- এই মর্মে লেখা ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন হলের প্রভোস্টরা। মধ্যরাত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া শুরু হয়েছে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টায় দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
ইউজিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় দেশের সকল পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিক্যাল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য কলেজসহ সকল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
উল্লেখ্য, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গত ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এতো ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’
প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা ধরে নিয়েছেন ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তাদেরকেই বলা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে গত রোববার মধ্যরাত থেকে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল সোমবার দুপুর থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাত ১০টার পর আন্দোলনকারীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সারা দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে তাদের সমর্থনে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে এসেছেন। দুপুরের পর থেকে ঢাকার সায়েন্সল্যাব এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।
এ পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকাসহ চার জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
সকল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশনা
অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা