শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে: প্রধানমন্ত্রী


আজ সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১৭ জুলাই, ২০২৪ ৭:৫১ : অপরাহ্ণ

কোটা সংস্কার নিয়ে উচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৮ সালে ছাত্রসমাজের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল করে একটা পরিপত্র জারি করে। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কোটা বহাল রাখার পক্ষে উচ্চ আদালত ২০১৮ সালের জারি করা সরকারের পরিপত্র বাতিল করে দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে পরিপত্র বহাল রাখার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয় এবং মহামান্য আদালত শুনানির দিন ধার্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সময় ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে আবারও আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার যথেষ্ট ধৈর্য্য ও সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে। বরং আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ সহযোগিতা করে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যখন আন্দোলনকারীরা সারকলিপি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে, সেক্ষেত্রে তাদের সুযোগটা দেওয়া হয় এবং নিরাপত্তারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

সরকারপ্রধান বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো কিছু মহল এই আন্দোলনের সুযোগটা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত উচ্চাভিলাস চরিতার্থ করার সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। এর ফলে এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে যে ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেল। আপনজন হারাবার বেদনা যে কী কষ্টের, তা আমার থেকে বেশি আর কে জানে। যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমি প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব ঘটনা ঘটেছে তা কখনোই কাম্য ছিল না। চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীরা বহুতল ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশে নির্মমভাবে নিচে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। অনেক ছাত্রের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। তাদের ওপর লাঠিপেটা ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। একজন মৃত্যুবরণ করেছে, অনেকে মৃতুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। ঢাকা, রংপুর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবন ও ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক হলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। সাধারণ পথচারী-দোকানিদের আক্রমণ, এমনকি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে বাধা প্রদান করা হয়। মেয়েদের হলে ছাত্রীদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে এবং লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। আবাসিক হলে প্রভোস্টদের হুমকি দেওয়া হয় এবং আক্রমণ করা হয়েছে। শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয়ে তাদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত, তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং সন্ত্রাসীরাই এদের মধ্যে ঢুকে সংঘাত ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, তাদের পরিবারের জন্য জীবন-জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে যে সহযোগিতা দরকার, তা আমি করবো।

সরকারপ্রধান বলেন, আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি, যারা হত্যাকাণ্ড, লুটপাট, সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে, এরা যেই হোক না কেন, তারা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায়, তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি আরও ঘোষণা করছি, হত্যাকাণ্ডসহ যেসব অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, তার সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাদের উসকানিতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হলো, কারা কোন উদ্দেশ্যে দেশকে একটি অরাজক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিলো, তা তদন্ত করে বের করা হবে। আমি আন্দোলনরত কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এই সন্ত্রাসীরা যেকোনো সময় সংঘাতের পরিবেশ তৈরি করে তাদের ক্ষতিসাধন করতে পারে। শিক্ষার্থীদের পিতামাতা, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের প্রতি আমাদের আবেদন, তারা যেন তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ থাকে। একইসাথে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষভাবে নজর রাখেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে। আপিল আদালতে শুনানির দিন ধার্য করেছে। আদালত শিক্ষার্থীদের কোনো বক্তব্য থাকলে তা শোনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ আছে। এই আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধানের সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও রাস্তায় আন্দোলনে নেমে দুষ্কৃতিকারীদের সংঘাতের সুযোগ করে দেবেন না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য আমি সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

সরকারপ্রধান বলেন, আমার বিশ্বাস আমাদের ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের মাতৃভূমিকে সকলের সহযোগিতায় স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। আমি আবারও এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় যারা নিহত হয়েছে তাদের জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমার সমবেদনা জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের ওপর দু’দফা সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ

টিএসসিতে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ, তুলে নিয়ে গেছে ডাকসু নেতাকে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল না ছাড়ার সিদ্ধান্ত কোটাবিরোধীদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, সন্ধ্যার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ

শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে হল ছাড়ছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর