বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা দেশজুড়ে

মধ্যরাতে জাবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, পুলিশের গুলি


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যরাতে মাথায় হেলমেট পরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ প্রতিনিধি, জাবি প্রকাশের সময় :১৬ জুলাই, ২০২৪ ৮:১৩ : পূর্বাহ্ণ

মধ্যরাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ভিসির বাসভবন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১টা ৫০ মিনিটে এ হামলা চালানো হয়। এতে বহিরাগতসহ ছাত্রলীগের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ভবনে আশ্রয় নেয়। এ হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অধিকাংশের মাথায় হেলমেট ও হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। এ সময় দুটি পেট্রলবোমা ছুড়তে দেখা যায় তাদের। হামলা থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে আশ্রয় নেন। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ করেন তারা।

পরে হল থেকে দুই হাজারের অধিক শিক্ষার্থী বের হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান। তবে এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে তিন সাংবাদিকসহ ছয় শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। শিক্ষার্থীরা এখনো উপাচার্য বাসভবনের ভেতরে আটকে রয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপাচার্যের উপস্থিতিতেই ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা চালায় এবং পুলিশ গুলি ছোড়ে।

হামলার প্রত্যক্ষদর্শী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘ভিসির বাসায় যখন ছাত্ররা আশ্রয় নেয়, তখন সন্ত্রাসীরা উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে। উপাচার্য ভবনে আমরা কয়েকজন শিক্ষক প্রবেশ করি এবং প্রক্টর ও কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষকের সাথে কথা বলাকালীন পুলিশের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা উপাচার্যের বাসার মেইন গেইট ভেঙ্গে বাসায় প্রবেশ করে। এসময় সশস্ত্র অবস্থায় সাধারণ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংস হামলা চালায়। আমরা তখন উপাচার্যের বাসার একটি কক্ষে আশ্রয় নেই। কিন্তু সন্ত্রাসী আমাদের শিক্ষক পরিচয় জানার পরেও হামলা চালিয়ে যেতে থাকে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ও বহিরাগতদের উপস্থিতি ছিল। এক পর্যায়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা সজল এসে আমাকে উদ্ধার করে। তবে এর মধ্যে প্রায় সকল শিক্ষক এবং অধিকাংশ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। সন্ত্রাসীদের হামলার পরেই পুলিশের হামলা শুরু হয়। তারা গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করে। কিন্তু যখন সন্ত্রাসীরা ভিসির বাসা ভাঙচুর ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে তখন পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম তাণ্ডব এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতা আমি কখনো দেখিনি।’

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশের কাছে যখন পরিস্থিতির অবনতি মনে হয়েছে, ঠিক তখন আমরা অ্যাকশনে গিয়েছি। আমরা কোনো শ্রেণিকে আলাদা সুবিধা দেইনি।’

এর আগে সোমবার সন্ধ্যার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় তাদের ওপর হামলা হয়। এতে অর্ধশতাধিক ছাত্রছাত্রী আহত হন। রাত সাড়ে আটটার দিকে এ ঘটনার বিচার চেয়ে ও অবৈধ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বিতাড়িত করতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন: 

ঢাবিতে আবার ছাত্রলীগের হামলা, গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ

লাঠিসোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও ছাত্রলীগ, আহত ৫০

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর