বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৫ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

থেমে গেছে সেই মতিউরের বিরুদ্ধে এনবিআরের অনুসন্ধান


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১৪ জুলাই, ২০২৪ ৯:২১ : পূর্বাহ্ণ
সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান
Rajnitisangbad Facebook Page

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুসন্ধান থেমে গেছে। কারণ দর্শানোর চিঠি চুড়ান্ত হওয়ার পরও অজ্ঞাত কারণে তা আটকে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের আয়কর নথিও ফেরত দিয়েছে সেন্ট্রাল ইন্টলিজেন্স সেল (সিআইসি)।

মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী-সন্তানের বিপুল সম্পদের তথ্য গণমাধ্যমে প্রচার হলে টনক নড়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের। এনবিআর থেকে তাকে সরিয়ে সংযুক্ত করা হয় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে। অভিযোগ অনুসন্ধান করতে কাজ শুরু করে সিআইসি। তথ্য যাচাইয়ে কর অঞ্চল থেকে মতিউর পরিবারের ৫ সদস্যের আয়কর নথি তলব করেন গোয়েন্দারা। নথি বিশ্লেষণ করে সম্পদের একটি পরিস্থিতি পত্র তৈরি হয়।

গোয়েন্দারা জানান, মতিউর বিষয়ে নতুন করে কোনো নির্দেশনা না থাকায় এ পর্যন্তই থেমে আছে কাজ। আয়কর নথিতে ফাঁকফোকর আছে কিনা তাও দেখা হচ্ছে না। মাঠ পর্যায়েও সম্পদের তথ্য যাচাইবাছাই হচ্ছে না। এরই মধ্যে মতিউর পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। সংস্থাটির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আয়কর নথিগুলো কর অঞ্চলে ফেরত দিয়েছে সিআইসি।

এ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘হঠাৎ করে থেমে যাওয়া যদি স্থায়ী রূপ নেয় আর বাস্তবে যদি এটির আর কোনো অগ্রগতি না হয় তাহলে ধরে নিতে হবে যে এটা শুধু প্রশ্নবিদ্ধ নয়, ভাবতে হবে এটা শুধু লোক দেখানো কিনা।’

এবার কুরবানির ঈদে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ‘সাদিক এগ্রো’ ফার্ম থেকে এগ্রো বিটল প্রজাতির খাসি ১৫ লাখ টাকায় কিনে আলোচনায় আসেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক যুবক। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গুঞ্জন ওঠে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে। রাজস্ব কর্মকর্তা বাবার দুর্নীতির টাকায় তিনি ১৫ লাখ টাকায় খাসিটি কিনেছিলেন।

এ ঘটনায় ওই ছেলে ও তার বাবাকে নিয়ে ফেসবুকে চলে বিস্তর সমালোচনা। বিভিন্ন পোস্ট ও কমেন্টে খাসির ক্রেতা যুবকের বাবার দুর্নীতি নিয়ে তদন্তের দাবি উঠে। তবে আলোচনা শুরুর পর ইফাতকে ছেলে হিসেবে অস্বীকার করেন মতিউর রহমান।

এ বিষয়ে মতিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ইফাত নামে আমার কোনো ছেলে নেই। এমনকি আত্মীয় বা পরিচিতও নন। আমার একমাত্র ছেলের নাম তৌফিকুর রহমান। একটি গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।

তবে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী জানান, ইফাত তার মামাতো বোনের সন্তান। আর মতিউর রহমানই তার বাবা।

এদিকে ১১ জুলাই ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী সন্তানদের ১১৬টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ২ হাজার ৩৬৭ শতাংশ জমি ও ৪টি ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মতিউর ছাড়া বাকিরা হলেন-মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্নব, মেয়ে ফারজানা রহমান ইস্পিতা ও দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আক্তার শিবলী।

ক্রোক হওয়া সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে, সভারে ২৬.৬১ শতাংশ জমি, ভালুকায় ১০৪ শতাংশ, ভালুকায় মতিউরের ভাই এ এম কাইউম হাওলাদারের মালিকানাধীন গ্লোবাল সুজের ৯৫৮ শতাংশ জমি, গাজীপুরে আপন ভুবন লি. এর ৮৭৫.৯৫ শতাংশ জমি, নরসিংদীর শিবপুরে মতিউরের স্ত্রী লায়লার নামে ৩৮ শতাংশ, ছেলে অর্ণবের নামে ১২৬ শতাংশ, মেয়ে ইপ্সিতার নামে ৭২ শতাংশ, নাটোরের সিংড়ায় লায়লা কানিজের নামে ১৬৬ শতাংশ জমি। এ ছাড়া মিরপুরের শেলটেক বিথীকা প্রকল্পে ১৮১২ স্কয়ার ফুটের ৪টি ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

স্থাবর সম্পত্তি ছাড়াও শেয়ার বাজারে তাদের ২৩টি বিও অ্যাকাউন্ট, ১১৬টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ১৩ কোটি ৪৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭১ টাকা ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দুদক সূত্র জানায়, অবৈধ সম্পদ এবং ব্যাংক হিসাবের টাকার অনুসন্ধানে রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা সরানোর তথ্য মিলেছে। ১১৫টি ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সেখানে মাত্র ৪ কোটি টাকা রয়েছে। আর ছাগলকাণ্ড নিয়ে হট্টগোলের মধ্যেই এসব হিসাব থেকে ৮ কেটি টাকা তুলে নেন মতিউর।

এর আগে ৩০ জুন মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ক্রয়কৃত কোনো জমি আছে কি না, সেটি জানতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে চিঠি দেয় দুদক।

আরও পড়ুন: সেই রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের অঢেল সম্পদের ভান্ডার

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর