রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১৩ জুলাই, ২০২৪ ৭:০৭ : অপরাহ্ণ
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নামে ‘মিথ্যা’ মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল লাইব্রেরি চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘মিথ্যা’ মামলা দেওয়ার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ আলটিমেটাম দেন তারা।
আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন, শিক্ষার্থীদের সাংবিধানিক অধিকারের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়াচ্ছে পুলিশ। আমরা প্রশাসনের কাছে সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করি।
এ সময় রমনা থানার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার রেকর্ড শুনিয়ে তারা বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, গত ১০ দিনের আন্দোলনে কোনো শিক্ষার্থী কোথাও কোনো হামলা করেনি। অথচ, অজ্ঞাতনামা হিসেবে মামলা করা হয়েছে। আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সারাদেশে আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
গতকাল শুক্রবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নামে মামলা দায়ের করে পুলিশ। মামলার এজাহারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশের যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা এবং মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার আসামি হিসেবে ‘অজ্ঞাতপরিচয় অনেক শিক্ষার্থী’ উল্লেখ করা হয়েছে।
রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের পরিবহন বিভাগের গাড়িচালক খলিলুর রহমান বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন। এ মামলা প্রত্যাহারে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নামে মামলা ঠুকে দিলো পুলিশ
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
যৌক্তিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর অংশ হিসেবে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির পর এবার গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
আজ সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা সংস্কার করে সংসদে আইন পাসের এক দফা দাবিতে আগামীকাল রোববার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে গণপদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে এবং রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেবেন।
এছাড়া একই দিনে ঢাকার বাইরে শিক্ষার্থীরা গণপদযাত্রা করে নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে একই দাবিতে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবেন।
এদিন নতুন কর্মসূচি ঘোষণার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ জানান, কোটার যৌক্তিক সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেবে না। এ সময় কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র-আন্দোলন যাতে কেউ ভিন্ন খাতে নিয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার ক্ষুণ্ন করতে না পারে, সে বিষয়ে দেশের গণমাধ্যম ছাড়াও মানবাধিকার সংগঠনের সহায়তা প্রত্যাশা করেন তারা।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।
ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২০২১ সালে সেই পরিপত্রের ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে’র অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।
গত ৪ জুলাই সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
গতকাল বুধবার হাইকোর্টের দেওয়া সেই রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। অর্থাৎ হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের আগে যে অবস্থা ছিল সেই অবস্থায় থাকবে। এ বিষয়ে আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। তবে আদালতের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা।