রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :১২ জুলাই, ২০২৪ ৭:৩০ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিতে ঝড় বইছে। নেতৃত্বের পালাবদল সংগঠনটিতে যেন সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে। ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে বসানো হয়েছে এরশাদ উল্লাহ ও নাজিমুর রহমানকে। কর্মীবিহীন এই দুই নেতাকে নেতৃত্বের আসনে দেখে যেন চোখ কপালে উঠেছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের। তাদের প্রশ্ন-ত্যাগী নেতাদের ডিঙিয়ে এরশাদ উল্লাহ ও নাজিমুর রহমান কার ‘আশীর্বাদে’ নগর বিএনপির কান্ডারি হলেন?
গত ৭ জুলাই এরশাদ উল্লাহকে আহ্বায়ক ও নাজিমুর রহমানকে সদস্য সচিব করে কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দুই সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরশাদ উল্লাহ নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও নাজিমুর রহমান নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। এরশাদ উল্লাহ থাকেন নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় আর নাজিমুর রহমান থাকেন নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে।
মহানগর ও কেন্দ্রীয় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগর বিএনপির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের পেছনে এবার ভূমিকা রেখেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। তার ‘আশীর্বাদে’ নেতৃত্বের স্বাদ পেয়েছেন এরশাদ উল্লাহ ও নাজিমুর রহমান।
এরশাদ উল্লাহ ও নাজিমুর রহমানের নেতৃত্বে নতুন কমিটি ঘোষণার পর উচ্ছ্বসিত আবদুল্লাহ আল নোমানের অনুসারীরা। কিন্তু নগর বিএনপির তৃণমূলে হতাশা নেমে এসেছে।
নগর বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন, এরশাদ উল্লাহ ও নাজিমুর রহমানের বিকল্প হিসেবে অনেক ত্যাগী নেতা ছিলেন। ২০১২ সাল থেকে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনে এরশাদ উল্লাহ ও নাজিমুর রহমানের কোনো ভূমিকাই ছিল না। এ সময়ে তারা রাজপথে কোনো ত্যাগ স্বীকার করেননি। মামলার ভারে জর্জরিত হননি, জেলও খাটেননি। তাদের কোনো কর্মীও নেই। কালেভদ্রে একা একা কর্মসূচিতে এসেছেন তারা। কর্মীবিহীন এই দুই নেতার জন্য নগর বিএনপির নেতৃত্ব দেওয়াটা অনেক কঠিন ও চ্যালেঞ্জ হবে।
২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদাত হোসেনকে আহবায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে নগর বিএনপির ৩৯ সদস্যের এই আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। গত ১৪ জুন কেন্দ্র থেকে এই আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। শাহাদাত-বক্করে নেতৃত্বাধীন কমিটি ভেঙে দেওয়ার এক মাসের মাথায় ঘোষণা করা হয় নতুন আহ্বায়ক কমিটি।
এর আগে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি ও আবুল হাশেম বক্করকে সাধারণ সম্পাদক করে নগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। তবে ডা. শাহাদাত এর আগে আমীর খসরুর সঙ্গে নগর বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ২০০৯ সালের ২১ ডিসেম্বর আমীর খসরুকে সভাপতি ও ডা. শাহাদাতকে সাধারণ সম্পাদক করে নগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
ডা. শাহাদাত হোসেন একটানা ১৪ বছর ও ও আবুল হাশেম বক্কর ৭ বছর নগর বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন।
কীভাবে নেতৃত্বে এলেন এরশাদ উল্লাহ ও নাজিমুর রহমান?
তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সহসভাপতি এরশাদ উল্লাহ রাজনীতিতে এসেছেন ১৯৯০ সালে নগর বিএনপির আহ্বায়ক মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের হাত ধরে। আর ১৯৮৩ সালে আবদুল্লাহ আল নোমানের হাত ধরে ছাত্রদলের রাজনীতিতে আসেন নাজিমুর রহমান। মীর নাছিরের হাত ধরে এরশাদ উল্লাহ রাজনীতিতে আসলেও পরে তার হাত ছেড়ে দেন। তবে তিনি কোনো গ্রুপিং রাজনীতিতে জড়াননি। কিন্তু নাজিমুর রহমান আবদুল্লাহ আল নোমানের হাত এখনো ছাড়েননি।
এরশাদ উল্লাহ বিএনপিতে যোগ দেওয়ার চার বছরের মাথায় ১৯৯৪ সালে মীর নাছির ও দস্তগীর চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন নগর বিএনপির কমিটির যুগ্ম সম্পাদক পদ পেয়ে যান। এরপর ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ (চাঁন্দগাও-বোয়ালখালী) আসনে বিএনপির প্রার্থী হন। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী জাসদ নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদলের কাছে হেরে যান। এরপর রাজনীতিতে ছন্দপতন ঘটে এরশাদ উল্লাহ’র। চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানের সাথে বিরোধে জড়িয়ে ২০১২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দল থেকে বহিস্কৃত হয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার হলে আবার দলে ফেরেন। দলে ফিরেই ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চান। কিন্তু মনোনয়ন দেওয়া হয় আবু সুফিয়ানকে। চট্টগ্রাম-৮ আসনে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে না পারলেও এবার নগর বিএনপির নেতৃত্ব পেয়েছেন এরশাদ উল্লাহ।
অপরদিকে ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন নাজিমুর রহমান। ২০০২ সালে ছাত্রদলের সভাপতি পদ থেকে বিদায় নেন। এরপর তিনি মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন পদে থাকলেও রাজপথে সক্রিয় ছিলেন না। দীর্ঘ সময় নিস্ক্রিয় থাকা এই ছাত্রনেতা এখন নগর বিএনপির কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন।
দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০২২ সালে তৃণমূলকে পুনর্গঠন করতে না পারায় ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের ওপর ক্ষুব্ধ হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তখন তিনি মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। তখনই এরশাদ উল্লাহ ও নাজিমুর রহমানকে নির্বাচন করা হয়। কিন্তু তখন সরকারবিরোধী আন্দোলনের কারণে মহানগর বিএনপিতে নতুন মেরুকরণ করতে চাননি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ বিষয়টি স্বীকার করে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছিল আড়াই বছর আগে। কিন্তু তখন সরকারবিরোধী আন্দোলনের কারণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পুরনো নেতৃত্ব বহাল রেখেছিলেন। আগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এখন নেতৃত্ব পরিবর্তন করা হয়েছে।’
দলীয় বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, আড়াই বছর আগে নেতৃত্ব চূড়ান্ত হওয়ার পর তখন থেকে জোট বাধেন এরশাদ উল্লাহ ও নাজিমুর রহমান। তাদের মধ্যে গড়ে উঠে গলায় গলায় ভাব। আর দুই নেতা সখ্যতা গড়ে তোলেন নোমান অনুসারীদের সঙ্গে। গত আড়াই বছর ধরে দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন প্রাঙ্গণে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে এই দুই নেতার সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে ছিলেন নোমানের অনুসারীরা। বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে এই দুই নেতাকে একসঙ্গে দেখা যেতো। নগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্তির পর গত ২৩ জুন হয়রত আমানত শাহ (রহ.) এর মাজারে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে আসার বার্তা দিয়েছিলেন তারা!
দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, এবার নগর বিএনপির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের পেছনে কোনো ভূমিকা ছিল না দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর। কারণ ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্কর নেতৃত্বে আসার পেছনে তিনি জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন। তাই এবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে মহানগরের নতুন কমিটি নিয়ে তিনি কারও ব্যাপারে কোনো মতামতও দেননি, আবার আপত্তিও করেননি।
সূত্রটি জানায়, আমীর খসরুর নীরবতায় সুযোগ লুফে নেন নগর বিএনপির এক সময়ের কাণ্ডারি আবদুল্লাহ আল নোমান। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে স্থান না পাওয়ার কারণে নোমানের মনে দীর্ঘ দিন অভিমান থাকলেও তিনি লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে এনেছেন। তিনি এরশাদ উল্লাহ ও নাজিমুর রহমানের পাশাপাশি নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেলের নামও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে প্রস্তাব করেন।
এ বিষয়ে জানতে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
দলীয় বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের মতো চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও মহানগরের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ানকেও কোণঠাসা করতে দলের একটি অংশ এরশাদ উল্লাহকে মহানগরের নেতৃত্বে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। আর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সংসদীয় আসনে (চট্টগ্রাম-৮) দলের মনোনয়নের বিষয়টি মাথায় রেখে সুফিয়ানকে ঠেকাতে এরশাদ উল্লাহও নগর বিএনপির নেতৃত্বে আসতে আগ্রহ দেখান। শাহাদাত, সুফিয়ান ও বক্কর তিনজনই আমীর খসরুর অনুগত। তারা মহানগর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির বেশিরভাগ কর্মসূচিতে আমীর খসরুকে প্রধান অতিথি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আবদুল্লাহ আল নোমানের মধ্যে মনে মনে প্রচন্ড ক্ষোভ ছিল।
দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, নোমানের সুপারিশ ছাড়াও এরশাদ উল্লাহ ব্যক্তিগতভাবে লন্ডনে বিভিন্ন মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে তদবির করেছেন। বিশেষ করে এরশাদ উল্লাহ’র শ্বশুর বাড়ি সিলেটের একজন নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে তিনি তারেক রহমানের কাছে সুপারিশ করেন। কমিটি ঘোষণার সপ্তাহ খানেক আগে তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে লন্ডনেও ছুটে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘নোমান সাহেব আমার জন্য তদবির করেছেন কিনা সেটা আমি জানি না। এ বিষয়ে তার কাছে জিজ্ঞাসা করেন। আমিও কোনো তদবির করিনি। আমি মনে করি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবকিছু বিবেচনা করে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।’
কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের সমালোচনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা সমালোচনা করছে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, একজন ১৪ বছর, আরেকজন ৭ বছর নেতৃত্বে ছিলেন। এরপরও কি তাদের তৃপ্তি মিটেনি? সমালোচনাকারীরা আর কত বছর তাদের (শাহাদাত-বক্কর) নেতৃত্বে রাখতে চান?’
আবদুল্লাহ আল নোমানের ‘আশীর্বাদে’ নেতৃত্বে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি আবদুল্লাহ আল নোমানের হাত ধরে ছাত্রদলের রাজনীতিতে এসেছি। তাই তখন তার সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু আমি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অনুসারী।’
বিগত সময়ে দলের আন্দোলনে ভূমিকা নিয়ে নেতাকর্মীদের সমালোচনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মঞ্চে উঠিনি বলে, বক্তব্য দিইনি বলে নেতাকর্মীদের অনেক মনে করছেন, আমি মাঠে ছিলাম না। আমি মঞ্চে উঠলেও আমাকে চেয়ার দিতো না, বক্তব্য রাখার সুযোগও দিতো না। তাই ইজ্জত রক্ষায় কর্মীদের কাতারে বসতাম আর বসে বসে বাদাম খেতাম।’
গত আড়াই বছর ধরে নোমানের অনুসারীদের সঙ্গে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে নাজিমুর রহমান কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এদিকে নগর বিএনপির নেতৃত্বে আসতে দলের হাইকমান্ডের কাছে বিভিন্ন মাধ্যমে তদবির করেছিলেন মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন দীপ্তিও। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-খুলশী) আসনে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, শেষ পর্যন্ত নোমান মনোনয়ন পেলেও দীপ্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টি তিনি ভালোভাবে নেননি। দীপ্তি নগর বিএনপির নেতৃত্বে আসলে নোমানের আসন হাতছাড়া হয়ে যাবে-এমন আশঙ্কায় তাকে যে কোনো প্রকারে ঠেকাতে একদিকে নাজিমুর রহমান, অন্যদিকে আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেলকে দাঁড় করানো হয়। দীপ্তি বিএনপির কেন্দ্রীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে লন্ডনে জোরালো লবিং করলেও পোড় খাওয়া নেতা নোমানের কূটকৌশলের কাছে তিনি ধরাশায়ী হন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির ব্যাপারে কেন্দ্রীয় পাঁচজন প্রভাবশালী নেতার চেয়ে চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান নেতা হিসেবে আবদুল্লাহ আল নোমানের মতামত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোশারফ হোসেন দীপ্তি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘যে কোনো রাজনৈতিক কর্মী মনোনয়ন চাইতেই পারে, এতে তো আমি দোষের কিছু দেখছি না। নোমান ভাই আমার নেতা, আমি উনার কর্মী। কমিটি নিয়ে উনার কূটকৌশলের বিষয়টি আমি জানি না। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে আমি বিব্রতবোধ করছি।’
জানতে চাইলে আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘দীপ্তিকে ঠেকাতে নোমান ভাই আমাকে কেন মাঠে নামাবেন? সে করে যুবদল, আমি করছি বিএনপি। আমি কেন তাকে ঠেকাতে যাবো? ওয়ান-ইলেভেনের সময় আমি ছাড়া ছাত্রদলের কোনো নেতা ছিল না। ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার জন্য আমাদের সভা ডাকতে হয়েছিল। আমি সেক্রেটারি ছিলাম, অথচ দীপ্তি আমাকেও না জানিয়ে আত্মগোপনে চলে যান।’
কেন সরিয়ে দেওয়া হলো শাহাদাত-বক্করকে?
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠনের জন্য ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করকে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় তিনি থানা-ওয়ার্ডের কমিটি করার আগে তৃণমূল নেতাকর্মীদের তথ্য সংরক্ষণ রাখতে তাদের ডাটা জমা নেওয়ার নির্দেশনা দেন।
এরপর মহানগর বিএনপির থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের জন্য দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানের নেতৃত্বে ৫টি পৃথক উপকমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। এই কমিটিগুলোকে ৯০ দিনের মধ্যে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ১২৯টি সাংগঠনিক ইউনিট ও ১৫টি সাংগঠনিক থানা কমিটি পুনর্গঠন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু তৃণমূল নেতাকর্মীদের ডাটা জমা নেওয়ার বিষয় নিয়ে নেতাদের মতানৈক্যের কারণে এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়।
এ বিষয়ে জানতে নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ। তিনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ডা. শাহাদাত হোসেন নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে আগে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক তৃণমূল নেতাকর্মীদের ডাটা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নগর বিএনপি নেতাদের অনেকে আগে থানা-ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের ডাটা তৈরি করার পক্ষে মত দেন। এ নিয়ে নেতাদের মধ্যে মতানৈক্যের কারণে তখন তৃণমূল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শাহাদাত-বক্কর তৃণমূলকে পুনর্গঠন করতে না পারার পেছনে বিএনপির এক কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যানের অনুসারী নেতাকর্মীদের ষড়যন্ত্র ছিল। শাহাদাত-বক্করকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তারা কৌশলে বিরোধ সৃষ্টি করে তৃণমূল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করেন।
মহানগর বিএনপির বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, নেতাদের কোন্দলের শিকার হয়ে নেতৃত্ব হারিয়েছেন শাহাদাত ও বক্কর। তারা নেতাদের কোন্দলের কারণে তৃণমূলকে পুনর্গঠন করতে পারেননি। কিন্তু তাদের নেতৃত্বে মহানগর বিএনপি উজ্জীবিত ছিল। তাদের আউট করে মহানগর বিএনপিকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: আবার চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা