রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১২ জুলাই, ২০২৪ ৪:৩৮ : অপরাহ্ণ
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে সর্বাত্মক ‘বাংলা ব্লকেড’ নামের অবরোধ কর্মসূচিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ঢাকা। ব্যবসা-বাণিজ্যেও পড়েছে প্রভাব। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আন্দোলনকারীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আদালতের আদেশ মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের কোনো কার্যক্রম কেউ যদি করে, তবে সেটি বরদাশত করা হবে না।’
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতির বিষয়টি আদালতের। আদালতের প্রতি সবার আস্থা রাখা এবং শ্রদ্ধা ও সম্মান থাকা উচিত। আদালতের আদেশ মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেটি সবার করা উচিত।’
পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঢাকার বাইরে বেশ কিছু জায়গায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আজ শুক্রবার দেশব্যাপী ক্যাম্পাসে-ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: আন্দোলন চলবে, সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক কোটাবিরোধীদের
গতকাল রাতে রাজধানীর শাহবাগে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘এক দফা দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা চাই সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে আইন পাস করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।
ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২০২১ সালে সেই পরিপত্রের ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে’র অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।
গত ৪ জুলাই সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
গতকাল বুধবার হাইকোর্টের দেওয়া সেই রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। অর্থাৎ হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের আগে যে অবস্থা ছিল সেই অবস্থায় থাকবে। এ বিষয়ে আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। তবে আদালতের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন:
কুমিল্লায় কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ, গুলি
শাহবাগে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙলো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা
সরকার চাইলে কোটার হার পরিবর্তন করতে পারবে, হাইকোর্টের রায়