শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা রাজধানী

সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা কোটাবিরোধীদের


আজ রাতে রাজধানীর শাহবাগে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতারা।

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :৮ জুলাই, ২০২৪ ৯:০৯ : অপরাহ্ণ

সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে কোটা বাতিলের দাবিতে এক দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’।

নতুন কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামী বুধবার সারাদেশে সর্বাত্মক ব্লকেড (অবরোধ) কর্মসূচি পালন করা হবে। এছাড়া আগামীকাল মঙ্গলবার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ অনলাইন ও অফলাইনে প্রচারণা চালানো হবে। তবে আগামীকাল সড়ক অবরোধ থাকছে না।

আজ সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে শাহবাগের সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, এই যে অর্ধবেলা করে অবরোধ দিচ্ছি এখানেই আমরা থেমে থাকব না। আমরা সর্বাত্মক ব্লকেডের পরিকল্পনা করছি। আগামীকাল আমাদের চলমান কর্মসূচি ছাত্র ধর্মঘট ও ক্লাস পরীক্ষা বর্জন চলবে। আমরা ব্লকেড প্রত্যাহার করি নাই। সর্বাত্মক ব্লকেডের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের যে এক দফা দাবি এটি আদালতের হাতে নেই। খেলার বল এখন সরকারের কোর্টে। আমরা সরকারকে বলবো, আমাদের দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করুন। আইন পাস করে আমাদের এক দফা দাবি পূরণ করুন। এখানে আদালতের কোনো এখতিয়ার নেই। সরকার চাইলেই এটা সম্ভব।’

এ সময় তিনি সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বাধা দিলে বা হয়রানি করা হলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।’

আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আজকে মন্ত্রীর কথায় মর্মাহত হয়েছি। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের মধ্যে এনে আমাদের হাইকোর্ট দেখানো হচ্ছে, অন্ধকে হাইকোর্ট দেখানো হচ্ছে। আপনারা আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না। আমরা ফিরে যাওয়ার জন্য রাজপথে আন্দোলনে নামি নাই। আমরা দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আপনারা দায়িত্বশীলরা সহজ বিষয়কে ঘোলা করছেন। আপনাদের জন্যই শিক্ষার্থীদের মাঝে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। আপনাদের ওপর আমরা আস্থা হারাচ্ছি।’

 

এর আগে আজ বিকেলে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের এক দফা দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিত অংশ হিসেবে শাহবাগ মোড়, সায়েন্সল্যাবসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। কাওরান বাজারে রেললাইন অবরোধ করায় সারাদেশের সঙ্গে এক ঘণ্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল। অবরোধের কারণে ঢাকা শহরের প্রধান সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: কোটাবিরোধী আন্দোলন: রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ‘বাংলা ব্লকেড’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।

ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

২০২১ সালে সেই পরিপত্রের ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে’র অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।

গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখার নির্দেশ দেন। এর প্রতিবাদে গত এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা।

আরও পড়ুন: কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন না করাই ভালো: অ্যাটর্নি জেনারেল

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর