রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা দেশজুড়ে

২০০ কোটির রাজস্ব ফাঁকি: পরোয়ানা জারির আড়াই বছরেও গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ


পাবনার বেড়া পৌরসভার মেয়র এস এম আসিফ শামস। ফাইল ছবি

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৫ জুলাই, ২০২৪ ৫:৪১ : অপরাহ্ণ

২০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার মামলায় ২০২১ সালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা (অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট) জারি করা হয়েছিল পাবনার বেড়া পৌরসভার মেয়র এস এম আসিফ শামসের বিরুদ্ধে। কিন্তু গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আড়াই বছরের বেশি সময়েও তাকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকুর ছেলে।

আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে দিব্যি ঘুরে বেড়িয়েছেন আসিফ শামস। অব্যাহত রেখেছেন নিয়মিত কার্যক্রম, করেছেন ফেসবুক লাইভ, অংশ নিয়েছেন নির্বাচনী প্রচারণায়।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আসিফ শামস আদালতে হাজির হয়ে কিছু নথি দাখিলের পর তার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করে নেন ঢাকার জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসারের আদালত।

তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার একটি কপি ২০২২ সালের ২৩ মে বেড়া থানার ওসির কাছে পাঠানো হয়েছিল।

গত বুধবার বেড়া থানার ওসি মো. রাশিদুল ইসলাম একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এই থানায় যোগদানের পর (২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর) আমি তার (আসিফ শামস) বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সম্পর্কে জানতে পারি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তখন আমি তাকে মৌখিকভাবে বলি পাওনা টাকা পরিশোধ করতে। তার বাবা বর্তমান সংসদ সদস্য ও সংসদে ডেপুটি স্পিকার। তিনি বর্তমান পৌরসভার মেয়র এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাকে গ্রেপ্তার করবো…আমার কি সাহস আছে? আমি তাকে শুধু মৌখিকভাবে কয়েকবার বলেছি।’

 

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটর ভিশন টেল লিমিটেডের চেয়ারম্যান আসিফের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এই মামলায় আরও আসামি করা হয় ভিশন টেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইরিন ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম, পরিচালক রাসেল মির্জা এবং শেয়ারহোল্ডার জিয়াউর রহমানকে।

বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, রাজস্ব ভাগাভাগি ও বার্ষিক লাইসেন্স ফি থেকে উদ্ভূত পাওনা আদায়ের জন্য মামলাটি করা হয়েছিল, যা এখন সুদসহ ২৩৫ কোটি টাকার বেশি হয়ে গেছে।

আদালত ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আসিফ, আইরিন, শরিফুল ও রাসেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর থেকে ওই চারজন পলাতক রয়েছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, আসিফ ২০২২ সালের মে মাস থেকে চলতি বছরের ২৩ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মসূচি এবং নির্বাচনী প্রচারণায় নিয়মিত অংশ নিয়েছেন।

‘অ্যাডভোকেট আসিফ শামস রঞ্জন’ নামের একটি ফেসবুক পেজে দেখা যায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সময় থেকে গতকাল পর্যন্ত আসিফ অন্তত ১২০ বার লাইভে এসেছেন।

স্থানীয়রা জানান, গত ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন আসিফ শামস। এ ছাড়া গত ৬ মে বেড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছে ভোট চেয়েছিলেন তিনি এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাবার প্রচারণায়ও তিনি অংশ নেন।

গতকাল আসিফ শামস একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বিটিআরসির অনুমতি নিয়ে ২০১৩ সালে ভিশন টেল লিমিটেড থেকে বের হয়ে আসি। মামলা তো হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। আদালতের নোটিশ ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সম্পর্কে আমাকে আগে জানানো হয় নাই।’

তিনি বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) আমি আদালতে হাজির হয়েছি এবং সমস্যার সমাধান হয়েছে।’

সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, আসিফ গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে বিদেশ চলে গেছেন। তবে আসিফকে বুধবার রাজধানীর রমনা এলাকায় একটি গাড়ির ভেতর দেখা গেছে।

তার ব্যক্তিগত সহকারী জানান, মেয়র আসিফ সর্বশেষ গত ২৮ জুন তার বেড়া অফিসে কাজ করেছেন।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর