বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০২৪ | ২০ আষাঢ়, ১৪৩১ | ২৭ জিলহজ, ১৪৪৫

মূলপাতা জাতীয়

টালমাটাল এনবিআর, এবার ফাঁসছেন আরেক কর্মকর্তা


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২ জুলাই, ২০২৪ ১১:০১ : পূর্বাহ্ণ
সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান খানের অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক।
Rajnitisangbad Facebook Page

এক ছাগলকাণ্ডে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অবস্থা যেন টালমাটাল। মতিউর ও ফয়সালের বিশাল অবৈধ সম্পদ অর্জনের খবর যখন মানুষের মুখে মুখে, ঠিক তখনই অবৈধভাবে কোটি টাকা অর্জনকারী আরেক এনবিআর কর্মকর্তার খোঁজ পেলো দুদক। তিনি হলেন এনবিআরের কাস্টমস বিভাগের সাবেক সহকারী কমিশনার মোখলেছুর রহমান খান (সাহান)। তিনি ও তার পরিবারের ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক। শুধু খোঁজ নয়, তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় তা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

প্রাথমিক অবস্থায় প্রায় ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস বিভাগের সাবেক সহকারী কমিশনার মোখলেছুর রহমান, তার স্ত্রী কান্তি রহমান ও ছেলে ফাইজুর রহমানের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে অভিযোগপত্র অনুমোদন পাওয়ার পর এখন চলছে আদালতে দাখিল করার প্রক্রিয়া।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, শিগগির এনবিআরের এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন।

দুদক উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ২৫ জুন কমিশন থেকে কাস্টমস কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের ২ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল।

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, মো. মোখলেছুর রহমান খান (সাহান) ১৯৮০ সালের ১ অক্টোবর কাস্টমস ও এক্সসাইজ অফিস বিভাগে পরিদর্শক পদে যোগদান করেন। তিনি গত ২০১২ সালে সহকারী কমিশনার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন।

২০১৬ সালের ৫ আগস্ট সহকারী কমিশনার হিসাবে ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস এক্সসাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় আসামি তার স্ত্রী কান্তি রহমান তার দ্বিতীয় স্ত্রী। তার প্রথম স্ত্রী ১৯৮৮ সনে মৃত্যুবরণ করার পর ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয় বিবাহ করেন। তার ২ ছেলের মধ্যে একজন ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী ও অন্যজন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

তদন্তকালে মোখলেছুর রহমান তার নিজ নামে ৫৪ লাখ ৯৮ হাজার ৪০৬ টাকার স্থাবর এবং ২ কোটি ৭৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬৭৫ টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন। তার মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ৮১ টাকা। তার পারিবারিক ব্যয় ১ কোটি ৬৩ লাখ ৪২ হাজার ২৪৬ টাকাসহ মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৬ লাখ ২৯ হাজার ৩৩৩ টাকা। যার বিপরীতে মোট আয় পাওয়া যায় ৪ কোটি ৩০ লাখ ৮২ হাজার ২২০ টাকা। অর্থাৎ ৬৫ লাখ ৪৭ হাজার ১১৩ টাকা অবৈধ হিসাবে হিসাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে। যা দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

 

অন্যদিকে কান্তি রহমানের নিজ নামে ৩ কোটি ৪১ লাখ ৭০ হাজার ২০৫ টাকার স্থাবর এবং ৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৪৯ হাজার ২০৫ টাকার সম্পদের বিবরণ পেয়েছে দুদক। যার পারিবারিক ব্যয়সহ মোট ৪ কোটি ২৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩৭১ টাকা হয়। আর ওই সম্পদের বিপরীতে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ১ কোটি ১৮ লাখ ৯ হাজার ৭১৮ টাকা। অর্থাৎ ৩ কোটি ১১ লাখ ২৬ হাজার ৬৫৩ টাকা অবৈধ হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে দুদকের তদন্তে।

এদিকে মোখলেছুর রহমানের বড় ছেলে ফয়জুর রহমান খান বর্তমানে বিদেশে থাকলেও তার বিরুদ্ধে আইনগত অপরাধ মিলেছে দুদকের তদন্তে। নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে ২০০৬-০৭ প্রথম আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবসা প্রদর্শন করলেও বাস্তবে তার কোনো ব্যবসা পাওয়া যায়নি। তবে গ্রামীণ ফোনে ৪০ হাজার টাকা বেতনের একটি চাকরি করতেন। যদিও ২০১৭ সাল থেকে ইংল্যান্ডের নাগরিকত্ব পেয়ে সেখানেই বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।

কোম্পানিতে চাকরিরত অবস্থায় ফয়জুর রহমান ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর রাজধানীর গুলশানে ২১ লাখ ৩৮ হাজার ৮১৯ টাকায় ১৯৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। এ ছাড়া তিনি কিশোরগঞ্জে ৫০ শতক জমি ও ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮০০ টাকা ব্যাংকসহ অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে মোট ২৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬১৯ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। যার বিপরীতে প্রমাণযোগ মোট আয় পাওয়া যায় ৪০ হাজার টাকা। এখানে ২৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনে তার বাবা মোখলেছুর রহমান খান তাকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন এবং তিনি তার বাবার অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদকে বৈধ করার অপচেষ্টা করেছেন। কৌশল হিসাবে নিজের নামে রেখে তার বাবাকে আমমোক্তার নিয়োগ করেছেন। সে কারণে ফাইজুর রহমান খানকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:

অবৈধ সম্পদ: কর কর্মকর্তা ফয়সালকে বগুড়ায় বদলি

সেই রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের অঢেল সম্পদের ভান্ডার

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর