সম্প্রতি ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সমঝোতা স্মারক সই করেছেন সেটা নিয়ে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ বিক্রির অভিযোগ তুলেছেন। সেটার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেই আমরা দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো করেছি। শেখ হাসিনা দেশ বিক্রি করে না, আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। যারা বিক্রির কথা বলে, তারাই ’৭১-এ পাকিস্তানের দালালি করেছে।’
সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতে ভারতের সঙ্গে রেলবিষয়ক চুক্তি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘দেশকে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে’ বলে সমালোচনা প্রসঙ্গও আসে।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার একটা প্রশ্ন আছে, ওজনটা কীসে মাপছে? কোনো কিছু বিক্রি হলে ওজন মাপা হয় না? এখন তো অবশ্য ইলেকট্রনিক মেশিন আছে, আগে তো দাঁড়িপাল্লায় হতো। তো কীসে মেপে বিক্রি হচ্ছে? বিক্রিটা হয় কীভাবে?’
শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, ‘একটি দেশের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট দিলে ক্ষতি কী? ইউরোপে তো কোনো বর্ডারই নাই। তারা কি একে অন্যের কাছে দেশ বিক্রি করে দিয়েছে? দক্ষিণ এশিয়ায় কেন বাধা দিয়ে রাখবো। মানুষ কি দরজা-জানালা বন্ধ রাখবে? এ কানেক্টিভিটির ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে। দেশের মানুষই লাভবান হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারাবিশ্বে একটিমাত্র মিত্র শক্তি ভারত, যারা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে আমাদের স্বাধীন করে দিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই কোনো দেশ যুদ্ধে সহযোগিতা করতে এলে তারা সেখানেই থেকে যায়। বিজয়ী হওয়ার পরও তারা দেশ ছাড়ে না। এরকম অসংখ্য নজির আমরা দেখেছি। অথচ ভারত আমাদের মিত্র হিসেবে যুদ্ধ করেছে এবং জাতির পিতার আহ্বানে আবার তারা ফিরেও গেছে।’
শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, ‘এরপরও যারা কথা বলে যে, ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাবে, এরপরও বিক্রিটা হয় কীভাবে? সেটাই তো আমার প্রশ্ন। আসলে যারা এটা বলে তারা নিজেই ভারতের কাছে বিক্রি করা। কারণ আমরা দেখেছি যখনই মিলিটারি ডিক্টেটররা (সামরিক স্বৈরাচার) এসেছে জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ওপর দিয়ে ভারতবিরোধী কথা বলেছে, আর ভারতে যেয়ে তাদের পা ধরে বসে থেকেছে। এগুলো আমার নিজের দেখা, জানা। কাজেই এই ধরনের কথা বলার কোনো অর্থ হয় না।’
তিস্তা প্রকল্প প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত সফরে তিস্তার পানি বণ্টন নয়, মহাপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ প্রকল্প নিয়ে চীনের পক্ষ থেকেও প্রস্তাব আছে। তবে যাদের প্রস্তাব লাভজনক হবে, তাদেরটাই গ্রহণ করবে বাংলাদেশ।’
বাংলাদেশকে তিস্তা-গঙ্গার পানি দিতে মমতার বিরোধিতা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিস্তার পানি চুক্তির বিষয়ে মমতা ব্যানার্জি চিঠি লিখেছেন তাদের প্রধানমন্ত্রীকে। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমার সাথে ভারতের সব দলের সাথে সম্পর্ক ভালো। দল-মত-নির্বিশেষে সে দেশে সবার সাথে ভালো সম্পর্ক আছে আমার। তবে নদী ড্রেজিং নিয়ে মমতা ব্যানার্জির কথাকে আমি সমর্থন করি।’
আরও পড়ুন: তিস্তা-গঙ্গার পানি নিয়ে কোনো চুক্তি নয়, মোদিকে হুঁশিয়ারি মমতার
উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে গত ২১ জুন নয়াদিল্লি যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এই রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে আরও সুসংহত করতে সাতটি নতুন ও তিনটি নবায়নকৃতসহ ১০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: হাসিনা-মোদি বৈঠক: ঢাকা-দিল্লির মধ্যে ১০ সমঝোতা স্মারক সই