শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪ | ১৫ আষাঢ়, ১৪৩১ | ২২ জিলহজ, ১৪৪৫

মূলপাতা জাতীয়

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

নোবেল পুরস্কারের আকাঙ্ক্ষা নেই, ড. ইউনূসকে ঈর্ষা করার কী আছে?


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৫ জুন, ২০২৪ ৮:২৮ : অপরাহ্ণ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস
Rajnitisangbad Facebook Page

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে কোনো ঈর্ষা নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আজকে তিনি যেখানে উঠেছেন সেখানে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছিলাম আমিই। উনাকে জেলাসি (ঈর্ষা) করার কী আছে? সে আসুক না, মাঠে আসুক, চলুক আমার সঙ্গে, আমেরিকায় ডিবেট হয় না, চলুক, আসুক কথা বলবো।’

সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে নাকি লিখেছেন, নোবেল পুরস্কারের জন্য আমার সঙ্গে নাকি দ্বন্দ্ব! আমার সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব নেই। জীবনেও নোবেল পুরস্কারের আমার কোনো আকাঙ্ক্ষাও নেই। কারণ আমার লবিস্ট রাখার মতো টাকাও নাই, পয়সাও নাই। আর আমি কখনো ওটা চাইনি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যিনি অর্থনীতি নিয়ে কাজ করলেন, ব্যাংকের একজন এমডি। তিনি যখন নোবেল প্রাইজ পান তার সঙ্গে আমি প্রতিযোগিতা করতে যাবো কেন?’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের শ্রমিকদের ২০০৬ সাল থেকে ওয়েলফেয়ার ফান্ডের একটি টাকাও দেওয়া হয়নি। তখন শ্রমিকরা মামলা করেছেন, সরকার করেনি। শ্রমিকরা শ্রম আদালতে মামলা করেছেন, সেই মামলায় তার (ড. ইউনূস) সাজা হয়েছে, আমার কী দোষ? বরং আজকে তিনি যেখানে উঠেছেন, তার পেছনে আমিই তো সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছিলাম। তিনি সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছে আমার হাত দিয়ে। আমরা সবাই মিলেই তুলেছি, এখন দোষ আমার!’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টি নিয়ে মামলা চলছে, তাই তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। ইউনুসের বিরুদ্ধে আমরা বা আমাদের সরকার লাগেনি। গ্রামীণ ব্যাংক তৈরি হয়েছিল জেনারেল এরশাদের সময়ে। একজন এমডি খোঁজা হচ্ছিল, ড. ইউনূসকে এনে ম্যানেজিং ডিরেক্টর করা হয়। এই ব্যাংক তার নিজের করা না। তিনি সেখানে এমডি হিসেবে চাকরি করতেন এবং বেতন পেতেন। ব্যাংকটি সরকারের সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। টাকা-বেতন সরকারের পক্ষ থেকেই দেওয়া হতো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চাকরিরত অবস্থায় এমনভাবে তিনি (ড. ইউনূস) ব্যাংকটি পরচালনা করেছেন, যে এটা তার নিজেরই করা। ওই ব্যাংকের আইনে ছিল, ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এমডি চাকরিতে থাকতে পারবেন। ৬০ বছরের পরেও ১০ ড. ইউনূস আইন ভঙ্গ করে পদে ছিলেন। পরে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক নজরে আনে। তখন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও আমার উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী তাকে অনুরোধ করেন, আপনার বয়স হয়ে গেছে, ইতোমধ্যে বেআইনিভাবে ১০ বছর পদে আছেন, আপনি এখানে উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন। কিন্তু তিনি এমডি পদ ছাড়বেন না।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘ড. ইউনূস অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা করেন। দুটি মামলাতেই হেরা যান। এখন তার বিরুদ্ধে যে মামলা তা সরকার করেনি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামীণ ফোনের ব্যবসাটা আমিই তাকে (ড. ইউনূস) দিয়েছিলাম। কারণ গ্রামীণ ব্যাংক তখন পতনের দিকে যাচ্ছিলো। প্রথমে ১০০ কোটি টাকা, এরপর ২০০ কোটি, পরে আরও ১০০ কোটি টাকা দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকটা চালু রাখার জন্য সহায়তা করি। তিনি প্রস্তাব দিলেন গ্রামীণ ফোনের ব্যবসাটা তাকে দিলে এখান থেকে যে লাভ আসবে, তা দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক চলবে। তাকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ, গ্রামীণ ফোনের একটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে কিনা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু তাই নয়, গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য বিদেশ থেকে অনেক টাকা অনুদান এসেছে। সেখান থেকে কয়টি টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে গিয়েছে? ব্যবসা খুলে ব্যবসা করেছে, ট্যাক্স দেয়নি। তিনি যে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন, তা নিজেই প্রমাণ করেছেন। যখনি মামলা হয়েছে তখনি কিছু টাকা দিয়েছেন। যখন কিছু টাকা দিলেন, তখনই তো প্রমাণ হয়ে গেলো যে, তিনি ট্যাক্স ফাঁকি দেন। এমনকি গ্রামীণ ফোনের কাছ থেকেও কয়েক দফা এভাবে টাকা আদায় করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূসের মাইক্রোক্রেডিট সামিট ক্যাম্পেইনের গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। আমিই কো-চেয়ার হিসেবে অংশগ্রহণ করি, জাতিসংঘে প্রস্তাব আনি। আমিও ভাবতাম এটি মানুষকে দারিদ্রমুক্ত করে। কিন্তু ধীরে ধীরে আমি দেখলাম, দারিদ্র দূরীকরণ নয়, এটি দারিদ্র লালন-পালন করে। দিন-রাত কাজ করা দরিদ্রদের উচ্চহারে সুদ দিতে হয়। যশোরের একটি এলাকায় হিলারি ক্লিংটনকে নিয়ে যে পরিবারগুলোকে মাইক্রোক্রেডিট দিয়েছিল, সেই পরিবারগুলো এখন কোথায়, জিজ্ঞাসা করেন। জমি-জমা বিক্রি করে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। অনেকে আত্মহত্যা করেছে সুদের চাপে।’

নোবেল পুরস্কারের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আবার লিখেছে নোবেল পুরস্কারের জন্য নাকি তার সঙ্গে আমার… আমার সঙ্গে কারো দ্বন্দ্ব নেই। আর আমি নোবেল পুরস্কারের জন্য আমার কোনো আকাঙ্ক্ষাও নেই। কারণ আমার লবিস্ট রাখার টাকাও নেই, পয়সাও নেই, আর আমি কখনো এটা চাইনি। হ্যাঁ, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি হওয়ার পরে শুধু আমার দেশে নয়, দেশে-বিদেশে অনেক বিদেশি, নোবেল লরিয়েট আমার জন্য লিখেছে। কই আমি তো কখনো তদবির করতে যাইনি, কারো কাছে বলতেও যাইনি। আমি তো কী পেলাম না পেলাম, ওটা নিয়ে আমি কখন ওগুলো আমার মাথার মধ্যেও নেই।’

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা দেশকে বিক্রি করে না

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর