রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৪ জুন, ২০২৪ ৯:১৩ : অপরাহ্ণ
তিস্তা-গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তি না করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে চিঠি লিখেছেন দেশটির পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অংশগ্রহণ ছাড়া তিস্তা এবং গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো রকম চুক্তিতে আমার তীব্র আপত্তি রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থ নিয়ে কোনো আপস করবো না।’
চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘তিস্তা-গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে হয়তো আপনার কিছু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কোনো মতামত না নিয়ে এমন একতরফা আলোচনা কাঙ্ক্ষিত বা গ্রহণযোগ্য নয়।’
বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণের সঙ্গে যে সুসম্পর্ক রাখতে চান, সেই বার্তা দিয়ে মমতা লিখেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে যথেষ্ট ভালোবাসি। তাদের জন্য আমরা ছিটমহল করে দিয়েছি। আমি নিজে যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম তখন ভারত-বাংলাদেশ রেলওয়ে সার্ভিস করে দিয়েছি। বাস সার্ভিস পরিষেবা চালু করেছি। কিন্তু পানি অত্যন্ত মূল্যবান। প্রাণ ধারণের রসদ নিয়ে কোনো সমঝোতা করতে আমরা প্রস্তুত নই। পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে পানিবণ্টনের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর।’
গত ২২ জুন নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে ‘তিস্তা-গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি’ নবায়নের জন্য ‘যৌথ কারিগরি কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরদিনই তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সরকারের ওই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হয়।
মমতা বলেন, ‘ভারতে তিস্তার পানি কমছে প্রতিবছর। এরপর যদি বাংলাদেশে পানি পাঠাতে হয় তবে উত্তরবঙ্গের কৃষি সেচ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি ভাগাভাগি করাটা যথাযথ হবে না।’
প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাকে বঞ্চনা এবং বাংলার পানি বিক্রি দেওয়ার অর্থ হলো আগামী দিন গঙ্গার ভাঙ্গন আরও বাড়বে, মানুষের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গের জনজীবনে গঙ্গার জলের গুরুত্বের পাশাপাশি গঙ্গা থেকে পাওয়া জল কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও বড় ভরসা। ফারাক্কা ফিডার ক্যানালের মাধ্যমে অন্তত ৪০ হাজার কিউসেক জল পেলে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখা সম্ভব। তা না হলে গঙ্গায় পলি পড়ে কলকাতা বন্দর জাহাজ চলাচলের উপযোগী নাব্যতা হারাতে পারে।’
আত্রাই নদীর ওপর বাংলাদেশের সীমানায় বাঁধ দেওয়ার বিষয়ে মমতা বলেন, ‘আত্রাই নদী দিয়ে এক সময় পানি আসত। তখন বালুরঘাট তথা গোটা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মানুষ সেই পানি পেত। কিন্তু চীনকে দিয়ে বাংলাদেশ সেখানে একটা বাঁধ তৈরি করে পুরো পানিটা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি বার বার চিঠি দিয়ে এর প্রতিবাদ করেছি।’
প্রধানমন্ত্রীকে হুঁশিয়ার করে এই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেন্দ্র যদি না শোনে, একতরফাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তবে বাংলাজুড়ে আন্দোলন চলবে, দেশজুড়ে আন্দোলন চলবে।’
আরও পড়ুন: হাসিনা-মোদি বৈঠক: ঢাকা-দিল্লির মধ্যে ১০ সমঝোতা স্মারক সই