শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪ | ১৪ আষাঢ়, ১৪৩১ | ২১ জিলহজ, ১৪৪৫

মূলপাতা জাতীয়

ছাগলকাণ্ড: সেই ইফাত মা-ভাইকে নিয়ে দেশ ছেড়েছেন


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২২ জুন, ২০২৪ ১:১১ : অপরাহ্ণ
রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলী। ছবি: সংগৃহীত
Rajnitisangbad Facebook Page

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাত তার মা শাম্মী আখতার শিভলী ও ভাই ইরফানকে নিয়ে দেশত্যাগ করেছেন। গত বুধবার চট্টগ্রাম হয়ে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেন তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ইফাত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে। যদিও গত বুধবার এই পরিচয় পুরোপুরি অস্বীকার করেন তিনি। আড়াল করেন ছেলের প্রকৃত পরিচয়।

মতিউরের দাবি ছিল, ইফাত তার ছেলে নন, এই নামে কাউকে চেনেনও না। তবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে মতিউরের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর ছেলে ইফাত।

রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান রাজস্ব আয় বাড়ানোর গুরু দায়িত্বে থেকে সরকারকে রাজস্ববঞ্চিত করে গুছিয়েছেন নিজের আখের। চাকরি জীবনের শুরু থেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে সম্পদ গড়েছেন রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান। এরই মধ্যে দেশেই প্রায় ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের হদিস মিলেছে। ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। এ ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে এফডিআর ও শেয়ারবাজারে নিজ নামে অর্ধশত কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে।

এ কর্মকর্তা হাতে পরেন ৩১ লাখ টাকার বেশি দামের রোলেক্স ঘড়ি। এমনকি ছাগলকাণ্ডে আলোচিত তরুণকেও কিনে দিয়েছিলেন প্রাডো, প্রিমিও ও ক্রাউনের মতো ৪টি বিলাসবহুল গাড়ি। এসব গাড়ি তার বিভিন্ন কোম্পানির নামে রেজিস্ট্রেশন করা। কিনে দিয়েছেন দামি দামি পাখিও।

চাকরি জীবনের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে অতিসম্প্রতি ছেলে ইফাতের ছাগলকাণ্ডে ফেঁসে গেছেন প্রভাবশালী এই সরকারি কর্মকর্তা। কুরবানির জন্য ১২ লাখ টাকায় ছেলের কেনা ছাগল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে বাবার পরিচয়ে টান পড়ে।

এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হলে প্রথমপক্ষের স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকীর সঙ্গে আলোচনা করে পারিবারিক ড্রামা সাজান মতিউর। মিডিয়ার সামনে দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান মুশফিকুর রহমান ইফাতের সঙ্গে তার সম্পর্ক অস্বীকার করেন। এতে বাঁধে জট। বাবার অস্বীকৃতি পারিবারিক টানাপড়েন চরমে ওঠে। সন্তান ইফাত রাগ-অভিমানে চেষ্টা চালান আত্মহননের।

জানা গেছে, ১১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৩ সালের ১ এপ্রিল ট্রেড ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসাবে চাকরিতে যোগ দেন মতিউর রহমান। এক পর্যায়ে ট্রেড ক্যাডার প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হলে মতিউর অ্যাডমিন ক্যাডারে না গিয়ে কৌশলে যোগ দেন কাস্টমস ক্যাডারে।

এর আগে ১৯৯০-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত পল্লী কর্মসংস্থান ফাউন্ডেশনে (পিকেএসএফ) চাকরি করেন তিনি। বরিশালের মুলাদী উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের আব্দুল হাকিম হাওলাদারের ছেলে মতিউর কাস্টমসে যোগ দিয়েই অর্থ-সম্পদের লোভে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ আছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে সেগুনবাগিচায় কাস্টমস বন্ড অফিসে যোগ দেন মতিউর। সেখানে কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে তাকে বদলি করা হয় টেকনাফে। বদলির ছয় মাসের মধ্যেই তৎকালীন এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ছেলে (যার নামের আদ্যাক্ষর ‘ব’) সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে ঢাকার শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগে পোস্টিং বাগিয়ে নেন। দীর্ঘদিন এখানে দায়িত্ব পালন করে ২০০৬ সালের শেষ দিকে তিনি বদলি হন চট্টগ্রাম বন্দর হাউজে।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। একই নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে বক্তব্য চেয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি জবাব দেননি।

আরও পড়ুন: সেই রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের অঢেল সম্পদের ভান্ডার

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর