রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২১ জুন, ২০২৪ ১১:২১ : পূর্বাহ্ণ
সুইস ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেওয়ার হার গত কয়েক বছর ধরে বাড়ছে। গত বছর সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ সাড়ে ৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ থেকে কমে ১ কোটি ৮০ লাখ ফ্রাঁ হয়েছে। দেশটির ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেওয়ার এই গতিকে অস্বাভাবিক বলা হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সুইস ব্যাংকে আমানত কমে যাওয়ার মানে এই নয় যে, দেশ থেকে অবৈধভাবে পুঁজি পাচার বন্ধ হয়ে গেছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, অবশ্যই দেশের বাইরে অবৈধ অর্থ পাচার বেড়েছে ও পাচার হচ্ছে। কিন্তু সুইস ব্যাংক এখন আর পছন্দের গন্তব্য নয়। এটি এখন আর পরিচয় গোপন রাখার জায়গা নয়। এখন দুবাই ও সিঙ্গাপুর সবচেয়ে কাছের গন্তব্য হিসেবে পছন্দের শীর্ষে আছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডের রিয়েল এস্টেট এবং ব্যবসায়ে অর্থ পাচার এবং বিনিয়োগ করা হয়।
এসএনবির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালেও সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। কিন্তু পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে তা কমে ৫ কোটি ৫০ লাখ ফ্রাঁতে দাঁড়ায়।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ৮৭২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে পৌঁছায়। যা দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ জমা।
তবে ২০২০ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ তার আগের বছরের তুলনায় কম ছিল। ওই বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ হাজার ২০৩ কোটি টাকার বেশি।
তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্রাঁ। ২০১৮ সালে এই অর্থের পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি সুইস ফ্রাঁ। আর ২০১৭ সালে এর পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ।
এদিকে, বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকের সুইস ব্যাংকে অর্থ আমানতের হার ২০২৩ সালে প্রায় ৭০ শতাংশ কমেছে। গত চার বছরের মধ্যে ভারতীয়দের আমানতের পরিমাণ সর্বনিম্নে পৌঁছেছে ২০২৩ সালে।
তবে সুইস ব্যাংকে বিদেশি গ্রাহকদের অর্থ জমার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাজ্য। সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে ব্রিটিশ নাগরিকদের ২৫৪ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ রয়েছে। এরপরই ৭১ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
আর ফ্রান্স রয়েছে এই তালিকার তৃতীয় স্থানে। সুইস ব্যাংকে দেশটির নাগরিকদের প্রায় ৬৪ বিলিয়ন ফ্রাঁ রয়েছে। ওই তিন দেশের পর শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জার্মানি, হংকং, সিঙ্গাপুর, লুক্সেমবার্গ এবং গার্নসি।
আমানত হ্রাস পাওয়ার পরও সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের অর্থের পরিমাণ ১ দশমিক ০৪ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে দাঁড়িয়েছে; যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার ৭৭১ কোটি রুপি। এ নিয়ে সুইস ব্যাংকে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের আমানত টানা দ্বিতীয়বারের মতো কমেছে।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ‘মোট দায়ের’ মধ্যে ব্যক্তিগত, ব্যাংক এবং অন্যান্য উদ্যোগের আমানতসহ সব ধরনের তহবিল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মানুষ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বৈধ-অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ গচ্ছিত রাখেন। দেশটির কঠোর গোপনীয় ব্যাংকিং নীতির কারণে সারা দুনিয়ার মানুষ সেখানে অর্থ জমা রাখেন।
সুইজারল্যান্ডের আইনে গ্রাহকদের গোপনীয়তা দৃঢ়ভাবে রক্ষার নিয়ম রয়েছে। এ আইনের ফলে দেশটির ব্যাংকগুলো কোনো পরিস্থিতিতেই গ্রাহকদের তথ্য কারও কাছে প্রকাশে বাধ্য নয়।
ফলে কারা, কেন অথবা কীভাবে অর্থ ব্যাংকে রাখছেন, সে সম্পর্কে ব্যাংকগুলো কাউকে কোনো তথ্য দেয় না। তবে সম্প্রতি গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ও সমালোচনা দেখা দেওয়ায় অনেকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে তাদের অর্থ সরিয়ে নিচ্ছেন।