রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৭ জুন, ২০২৪ ৬:২০ : পূর্বাহ্ণ
বছর ঘুরে আবার এলো ত্যাগ ও মহিমার ঈদ। আজ সোমবার দেশের মুসলিম সম্প্রদায় মহান আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন।
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। মুসলমানদের জীবনে বছরে দুটি খুশির দিনের একটি এই ঈদুল আজহা। এই ঈদে পশু কোরবানিই প্রধান ইবাদত। তাই পবিত্র ঈদুল আজহা আমাদের দেশের মানুষের কাছে ‘কোরবানির ঈদ’ নামেই পরিচিত।
ঈদুল ফিতরের ক্ষেত্রে আরবি হিজরির শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা নিয়ে প্রতিবছরই ‘আজ’ না ‘কাল’ অনিশ্চয়তা থাকে একেবারে রোজার শেষ পর্যন্ত।
কিন্তু ঈদুল আজহার ক্ষেত্রে তেমনটি হয় না। ১০ দিন আগেই জিলহজের চাঁদ উঠার পর নির্ধারণ হয়ে যায় ঈদের দিনক্ষণ। সে অনুসারে পশু কেনা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়াসহ ঈদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে থাকেন সবাই।
ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়। কোরবানিদাতা কিয়ামতের দিন জবেহকৃত পশুর লোম, শিং, ক্ষুর, পশম ইত্যাদি নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। কোরবানির রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়। অতএব, তোমরা কোরবানির সঙ্গে নিঃসংকোচ ও প্রফুল্ল মন হও।’- (হাদীস: ইবনে মাজাহ, তিরমিজি)
কোরবানির ইতিহাস সুপ্রাচীন। হজরত আদম (আ.) থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সব নবী-রাসূল ও তাঁদের অনুসারীরা কোরবানি করেছেন।
ইসলামের ইতিহাসে হজরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল-কাবিলের মাধ্যমে প্রথম কোরবানির সূত্রপাত হয়। প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহ’র সন্তুষ্টি লাভের জন্য হযরত ইব্রাহিম (আ.) নিজের ছেলে হযরত ইসমাইল (আ.) কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হযরত ইসমাইল (আ.) এর পরিবর্তে একটি দুম্বার কোরবানি হয়ে যায়।
হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর সেই ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায় প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ লাভের জন্য পশু কোরবানি করে থাকেন।
কোরবানির মধ্যে দিয়ে নিজের ভেতরের পশুত্বকে পরিহার করা ও হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মহান আত্মত্যাগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আগামীকাল সকালে মুসল্লিরা নিকটস্থ ঈদগাহ বা মসজিদে আসবেন ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের জন্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় করবেন।
নামাজ শেষে শুরু হবে কোলাকুলি, শুভেচ্ছা ও সৌহার্দ্য বিনিময় । এরপর অনেকেই যাবেন কবরস্থানে স্বজনের কবর জিয়ারত করতে। আনন্দের দিনে অশ্রুসিক্ত হয়ে চিরকালের জন্য চলে যাওয়া স্বজনের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে করজোড়ে মোনাজাত করবেন তারা।
নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে মহান আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি এই ঈদের প্রধান কর্তব্য। সামর্থ্যবানেরা নিজেদের নামে, প্রিয়জনের নামে পশু কোরবানি দিয়ে আল্লার সন্তুষ্টি আদায়ে সচেষ্ট হবেন। যাদের সামর্থ্য নেই তারাও বাদ যাবেন না ঈদের আনন্দ থেকে। আল্লাহতাআলা সামর্থবান মুসলমানদের জন্য পশু কোরবানি বাধ্যতামূলক করেছেন।
আর সেই কোরবানির মাংসের তিনভাগের এক ভাগ দরিদ্র মানুষের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া ইসলামের বিধান। যার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে সম্প্রীতি। ঈদের পরে আরও দুই দিন, অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কোরবানি করার বিধান আছে।
টিকিটের হাহাকার, সড়কে ভোগান্তি, যানজট, বৃষ্টি-নানা ঝক্কি ঝামেলা পেরিয়ে ইতোমধ্যে শিকড়ের টানে গ্রামের বাড়ি ফিরে গেছেন শহুরে মানুষেরা।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।