মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪ | ১১ আষাঢ়, ১৪৩১ | ১৮ জিলহজ, ১৪৪৫

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

পটিয়া হুলাইন এআরএইচ ব্রিকফিল্ড

কলেজের সামনে ইটভাটা পুড়ে গেছে কৃষিজমি


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৫ জুন, ২০২৪ ১১:৪৫ : পূর্বাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হাবিলাস দ্বীপ ইউনিয়নের হুলাইন পাচুরিয়ায় চলছে এআরএইচ ব্রিকফিল্ড। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০০ ফুটের মধ্যে অবস্থানের কারণে ২০১৯ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর ৩ লাখ টাকা জরিমানা করে ইটভাটাটি বন্ধ করেছিল। কিন্তু পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া ফের চালু হয়। এ ছাড়া ভাটায় ইট বানতে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি। এমনকি আবাদি জমির টপ সয়েল দেখা গেছে। মাটির উৎস সম্পর্কে সদুত্তর দিতে পারেনি ইটভাটা কর্তৃপক্ষ।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের (২০১৩) ধারা-৪ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। একই আইনের ধারা (৮)-এর (১) অনুযায়ী লাইসেন্স থাকলেও লোকালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপনের সুযোগ নেই। ধারা-৫ এর (১) অনুযায়ী- কৃষিজমি, পাহাড় বা টিলার মাটি কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। ধারা-৬ এ বলা হয়েছে- ইট পোড়ানোর কাজে কাঠ ব্যবহার নিষেধ।

সর্বশেষ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এআরএইচ ব্রিকফিল্ডে অভিযান চালান পটিয়া উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা। ২০১৩ সালের পরিবেশ আইনের ৪ ধারা লঙ্ঘনের অপরাধে ১৪ ধারায় এক লাখ টাকা জরিমানা করেন।

পটিয়া উপজেলার ইউএনও আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনি জানান, ফেব্রুয়ারিতে অভিযান চালিয়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। পরিবেশ ছাড়পত্র ও লাইসেন্স না থাকা এবং কৃষিজমির মাটি পোড়ানোর কারণে জরিমানা হয়েছিল। শিগগির আবার ইটভাটাটি পরিদর্শনে যাবেন তিনি।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার জানান, পটিয়ায় কোনো ইটভাটার ছাড়পত্র নেই। অবৈধ ইটভাটা বন্ধের অভিযান চলমান। হুলাইন সালেহ নুর ডিগ্রি কলেজের সামনে এআরএইচ ইটভাটাটি অবৈধ তালিকায় আছে। পরিবেশবিদ ও সাবেক অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, ইটভাটার কারণে পরিবেশ ও প্রতিবেশ বহুমাত্রিক ক্ষতির সম্মুখীন। টপ সয়েল কাটায় জমির উর্বরতা হারায়। জমির টপ সয়েল তৈরি হতে ২০ থেকে ২৫ বছর লাগে। কাঠ পোড়ানোর মাধ্যমে সবুজ বন উজাড় হচ্ছে। বর্তমানে তাপমাত্রা বাড়ার অন্যতম একটি কারণ এই ইটভাটা।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ ছাড়পত্র ও অন্যান্য ডকুমেন্টসহ আবেদনের পর লাইসেন্স দেওয়া হয়। এআরএইচ ব্রিকফিল্ড লাইসেন্সের জন্য একটি আবেদন দিয়েছে। কিন্তু এরপর কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। মালিকপক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে একাধিকবার বলা হলেও পাত্তা দেয়নি।

পটিয়া হুলাইন ছালেহ নুর ডিগ্রি কলেজের ১০০ থেকে ১৫০ ফুটের মধ্যেই এআরএইচ ইটভাটার অবস্থান। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ধোঁয়ার কারণে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পাশে থাকা একটি স’ মিল থেকে কাঠ যায়। ক্লাস চলাকালীন কালো ধোঁয়ায় নিঃশ^াস ভারী হয়ে ওঠে। কিন্তু মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে পারেন না।

বাংলাদেশে অসম্ভব কিছু নেই :
এআরএইচ ব্রিকফিল্ডের মালিক হেলাল উদ্দিন চৌধুরী সুমন জানান, এটা তাদের পারিবারিক ব্যবসা। তাদের একটি পত্রিকা আছে। লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা চালানোর বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অসম্ভব বলে কিছু নেই। ২০১২ সালের পর থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর ইটভাটার ছাড়পত্র দিচ্ছে না, তাহলে সারাদেশে কীভাবে চলছে? ডিসি অফিসের সঙ্গে একটা সিস্টেমে চলতেছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি জরিমানার বিষয়ে বলেন, সরকারের ফান্ড ক্রাইসিস দেখা দিলে এ ধরনের জরিমানা করে। আইন অনুযায়ী লোকালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বের বিষয়ে বলেন, ১৯৮৮ সালে ইটভাটার লাইসেন্স নিয়েছি; রাঙ্গুনিয়া ও বান্দরবানে ইটভাটা আছে। তারা সবকিছু দেখেই লাইসেন্স দিয়েছে, সেটার সাফারার কী আমি হবো?

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটার কয়েকশ ফুট উত্তরে জনতা স’ মিল। সেটির মালিক চৌধুরী হাসান মাহমুদ আকবরী। সেখানে অবৈধভাবে বনের গাছ চিরানো হয় এবং কাঠ পাচার হয়। ওই স’ মিল থেকেই অতিগোপনে কাঠ ইটভাটায় যায়। মূলত পত্রিকার প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছে। চৌধুরী হাসান মাহমুদ আকবরীর মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

দৈনিক আমাদের সময় অবলম্বনে

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর