পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের সব স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তার অস্থাবর সম্পদও ফ্রিজের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ আর্থিক লেনদেনকারী মোট ৩৩টি অ্যাকাউন্ট জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আস্সামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।
আদালতে দেওয়া আবেদনে বলা হয়, সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ না করা গেলে, তা হস্তান্তর হয়ে যেতে পারে। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না।
পরবর্তী সময় আদালতের দেওয়া আদেশে বলা হয়েছে মানি লন্ডারিং আইন ২০১২-এর ১৪ ধারা এবং দুদক বিধিমালা ২০০৭-এর বিধি ১৮ অনুযায়ী সব স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজের আদেশ দেওয়া হলো।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বেনজীর আহমেদের বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়। এরপর থেকেই বেশ আলোচনায় পুলিশের সাবেক এই আইজি।
বেনজীরের বিপুল সম্পদের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র। এছাড়াও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছের এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি।
অথচ গত ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদ বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার মতো হওয়ার কথা।
বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকে চিঠি দেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ৩৪ বছর ৭ মাস চাকরি করে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে অবসরে যান। অবসর গ্রহণের পর দেখা যায়, বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও কন্যাদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে, যা তার আয়ের তুলনায় অসম।
বেনজীর আহমেদ তার পদের অপব্যবহার করে তার আয়ের তুলনায় প্রতিবেদনে উল্লিখিত সম্পত্তিগুলো অধিগ্রহণ করেছেন বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে চিঠিতে জানান ব্যারিস্টার সুমন।
এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী, বড় মেয়ে এবং ছোট মেয়ের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ সংগ্রহের জন্য তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদককে অনুরোধ করেন তিনি।