রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২২ মে, ২০২৪ ১:৪১ : অপরাহ্ণ
টানা নয়দিন নিখোঁজ থাকার পর কলকাতার একটি ফ্ল্যাট থেকে ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ উপজেলা) আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ উদ্ধার করার ঘটনায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
কলকাতার পুলিশ জানিয়েছে, আজ বুধবার সকালে কলকাতার বিধাননগরের নিউটাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাট থেকে এমপি আনারের সম্পূর্ণ মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। দেহের মূল অংশ ট্রলিতে ভরে পাচার করা হয়েছে, আর দেহাবশেষ উদ্ধার করা গেছে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে তারা।
গত ১১ মে আনোয়ারুল আজিম আনার চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এমপি আনারের শেষ মোবাইল লোকেশন মিলেছিল বিহারে। গত ১৪ মে থেকে তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়। গত আট দিন ধরে নিখোঁজ থাকলেও তার ফোন থেকে পরিবারের সদস্যদের কাছে মেসেজ পাঠানো হয় যে তিনি নয়াদিল্লি চলে গেছেন।
১৩ মে নিউটাউনের একটি ফ্ল্যাটে যান এমপি আনার। সেই ফ্ল্যাটেই খুন করা হয় তাকে। নিউটাউনে যে ফ্ল্যাটে তিনি গিয়েছিলেন সেটা একজন এক্সাইজ অফিসারের। ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটেই খুন করা হয়েছে এমপি আনারকে। খুনের দিন এই ফ্ল্যাটে নাকি নারীসহ একাধিক লোকজন ছিলেন। কিন্তু আনারের রহস্যজনক মৃত্যুর পর সবাই ভারত থেকে পালিয়ে গেছেন।
জানা গেছে, মোট ছয়জন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। তাদের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। এমপিকে হত্যার পর পাঁচজন দেশে ফিরে আসে এবং একজন এখনও ভারতেই অবস্থান করছে। তবে বাংলাদেশে ফিরে আসা পাঁচজনের মধ্যে একজন অন্য দেশে পাড়ি দিয়েছে। আর ভারতে অবস্থান করা ব্যক্তিকে আটক করতে চেষ্টা করছে ভারতের পুলিশ।
মূলত নিখোঁজের অভিযোগ পাওয়ার পর এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুইজনকে আটক করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারাই জানান, মরদেহ আছে সঞ্জিভা গার্ডেনে। সে খবর দেওয়া হয় কলকাতা পুলিশকে। পরে আজ এই মরদেহ উদ্ধার করে ভারতের পুলিশ।
জানা গেছে, যে ফ্ল্যাট থেকে আনোয়ারুল আজিম আনারের খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তার মালিকও একজন বাংলাদেশি। তিনি ভারতে গিয়ে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে ওই ফ্ল্যাট কিনেছেন। কলকাতার পুলিশ তাকেও খুঁজছে বলে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এমপি আজিম একা ভারতে গেছেন বলে শুরু থেকে প্রচার করা হলেও আসলে তার সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন। তারাও বাংলাদেশি বলে এখন পর্যন্ত তথ্য মিলেছে। সিসিটিভি ক্যামেরার কিছু ফুটেজে ভারতীয় গোয়েন্দারা এমন তথ্য পেয়েছেন। ওই দুই ব্যক্তি এমপি আজিমের দীর্ঘদিনের পরিচিত। তাদের বাড়ি এমপির এলাকায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, গত ১২ মে দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এমপি আনার। ইমিগ্রেশন শেষ করে ভ্যানে চড়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন তিনি। এ সময় এমপি আনার সাদা শার্ট পরিহিত ছিলেন। ভ্যানচালক আর এমপি আনার ছাড়া ভ্যানে আরও কেউ ছিলেন। পিছনে একটি ব্যাগও ছিল।
ভারতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বরানগর থানার অন্তর্গত ১৭/৩ মণ্ডল পাড়া লেনের বাসিন্দা স্বর্ণ ব্যবসায়ী দীর্ঘদিনের পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে উঠেন আনার।
পরদিন দুপুর ১টা ৪০ নাগাদ ওই বাড়ি থেকে কিছুটা হেঁটে বিধানপার্ক কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে গিয়ে একটি গাড়িতে উঠেন। ওই সময় তিনি হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন। সেই দৃশ্য দেখেছেন গোপাল বিশ্বাসের পরিচিত শুভজিৎ মান্না।
তবে সন্ধ্যায় গোপাল বিশ্বাসের মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ম্যাসেজ আসে, তিনি (এমপি আনার) রাতে ফিরছেন না, দিল্লি যাচ্ছেন। এ সময় যাতে তাকে আর ফোন না করা হয়। তিনি দিল্লি পৌঁছে নিজেই ফোন করবেন-এমনটাও ম্যাসেজে লেখা ছিল।
এরপর আনারকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। তিন দিন পর ১৫ মে সকাল সোয়া ১১টায় তিনি শেষ ম্যাসেজে জানান, দিল্লি পৌঁছে গেছেন। তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন।
কলকাতার বরাহনগর থানায় ১৮ মে লিখিত মিসিং ডায়েরিতে এসব তথ্য উল্লেখ করেন ভারতে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস।
আরও পড়ুন:
নিখোঁজ এমপি আনোয়ারুল আজিমের লাশ পাওয়া গেলো কলকাতায়
ভারতে গিয়ে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনার!