বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

ভারতের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নমনীয়তা হাস্যকর: ডোনাল্ড লু


যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। ফাইল ছবি

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৬ মে, ২০২৪ ৪:৩৬ : অপরাহ্ণ

বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানিয়েছেন সদ্য ঢাকা সফর করে যাওয়া দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

ভারতের মধ্যস্থতা বা তাদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান নরম করেছে-বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগও উড়িয়ে দেন তিনি। এমন দাবিকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন ডোনাল্ড লু।

গতকাল বুধবার মধ্যরাতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে প্রথম আলো এবং ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।

সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড লু র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ওপর নৃশংসতার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র বিক্ষোভ, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ, এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ভারতের চোখে দেখে বলে এ অঞ্চলে যে ধারণা বিদ্যমান সে প্রসঙ্গে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘বাংলাদেশে নিজ স্বার্থ নিজস্ব বিবেচনা বা দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত, চীন কিংবা রাশিয়ার স্বার্থের দৃষ্টিকোণ দিয়ে নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশি বন্ধুদের সঙ্গে আমরা সরাসরি আলোচনা করি। তবে এটাও সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে আলোচনা হয় এ অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে। সেই আলোচনায় শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ- কখনো কখনো বাংলাদেশ প্রসঙ্গও থাকে।’

ডোনাল্ড লু বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছিল, তা পাশে সরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সামনে এগিয়ে যেতে চায়। এক প্রশ্নের জবাবে লু বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা ও ভোটারদের ওপর বলপ্রয়োগ করায় আমরা পুলিশ, সরকারি ও বিরোধী দলের নেতাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলাম। আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে অর্থপূর্ণ সংলাপে বসতে বলেছিলাম। আমরা সভা-সমাবেশ ও বাকস্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার ছিলাম। এটা খুবই স্বাভাবিক। সব অঞ্চলেই আমরা এমন করি। বাংলাদেশে এসব মূল্যবোধ বজায় রাখতে আমরা কাজ করে যাবো।’

যুক্তরাষ্ট্রের এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কের মাঝে অনেক জটিল বিষয় রয়েছে। গত বছর নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে অনেক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, এটা তো এখন আর গোপন নয়। র‍্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছি। ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন নিয়েও কথা বলেছি। বিষয়গুলো তো জটিল। যেমন শ্রম অধিকারের মতো বিষয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। এতে অগ্রগতি খুব ধীরগতির। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতিতে সময় লাগে।’

ডোনাল্ড লু বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বলেছি, জটিল বিষয়ের পাশাপাশি আমরা সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র খুঁজবো। ইতিবাচক অ্যাজেন্ডা নিয়ে কাজ করবো। আমার বিশ্বাস, আমরা যদি ইতিবাচক বিষয় নিয়ে কাজ করি যেমন যুক্তরাষ্ট্রে যদি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানো হয়, ক্রমবর্ধমান হারে ব্যবসা ও বিনিয়োগ হয়, পরিবেশবান্ধব জ্বালানির জন্য পথ তৈরি করা যায়, যাতে বাংলাদেশের পরিবেশের উন্নতি হয় আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা যায়; আমরা যদি এ বিষয়গুলো করতে পারি, তবে জটিল বিষয়গুলো সমাধানের পথ আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে।’

র‍্যাবের বিরুদ্ধে বিদ্যমান মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো অগ্রগতি আছে কি না? জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘র‍্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল আছে। এক বছর আগে বাংলাদেশ সফরের সময় র‍্যাবের বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ তুলেছিলাম। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত বছর তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল, র‍্যাবের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। এটা বিরাট ঘটনা। এটা অবশ্যই ভালো অগ্রগতি উল্লেখ করেই বলতে চাই, আমাদের এখনো উদ্বেগ রয়ে গেছে। আমরা দেখছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য বিভাগের সদস্যরা এসব অপরাধ করে চলেছেন। র‍্যাবের অতীতের অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করা হচ্ছে কি না, সেটাও আমরা দেখতে চাই। এ বিষয়গুলো কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।’

ডোনাল্ড লু বলেন, ‘আমরা জানি যে, বাংলাদেশ সরকারের (র‍্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার) প্রক্রিয়া নিয়ে ধৈর্যের অভাব আছে। গত বছর বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ার মাধ্যমে এটা প্রমাণিত যে, র‍্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন না করেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারে।’

এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে আমরা সেটি নিয়ে কথা বলি। কারণ, বাংলাদেশ আমাদের সহযোগী। আমাদের কোনো সমস্যা দেখলেও বাংলাদেশ তা খোলা মনে বলতে পারে। লু বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ দমনকালে পুলিশের অতি উৎসাহী পদক্ষেপ থাকলে তা অবশ্যই তদন্তে ধরা পড়বে। পুলিশ অতি উৎসাহী কাজ করলে তাকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। গণতন্ত্রে এটাই হয়।’

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর