রাজনীতি সংবাদ প্রতিনিধি, প্রকাশের সময় :২১ এপ্রিল, ২০২৪ ১১:০৫ : পূর্বাহ্ণ
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স যেন টাকার খনি। মসজিদটির ১০টি দানবাক্স থেকে এবার মিলেছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা; যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
২২০ জনের একটি দল দীর্ঘ সাড়ে ১৮ ঘণ্টায় এ টাকা গণনা কাজে অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়াও দানবাক্সে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে।
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় মসজিদের ১০টি লোহার দানবাক্স খোলা হয়। দানবাক্সগুলো থেকে টাকা বের করে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এবার ২৭ বস্তা টাকা হয়। এরপর টাকাগুলো মেঝেতে ঢেলে গণনা করা হয়। সকাল ৯টায় এ টাকা গণনার কাজ শুরু হয়; যা শেষ হয় রাত ২টার দিকে।
টাকা গণনা দেখতে শহরের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মসজিদে ছুটে আসেন।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজ জানান, পাগলা মসজিদে এবার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া গেছে। টাকাগুলো পুলিশি নিরাপত্তায় রূপালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখায় পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর এই মসজিদের ৯টি দানবাক্স থেকে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গিয়েছিল।
প্রতি তিন মাস পর পর মসজিদটির দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এবার ৪ মাস ১০ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে।
পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মসজিদে ৯টি দানবাক্স থাকলেও দানের টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় আরও একটি অস্থায়ী দান সিন্দুক বাড়ানো হয়েছে। এই নিয়ে পাগলা মসজিদে দানবাক্সের সংখ্যা ১০টিতে দাঁড়ালো।
জানা গেছে, মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়।
মসজিদ কমিটি ও কমপ্লেক্সের সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স ও মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়নে প্রাথমিক কর্মকাণ্ড চলমান। শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। যার নাম হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। সেখানে ২২ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছে বহু বছর আগে।
জনশ্রুতি রয়েছে, এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বসবাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।
কিন্তু ওই সাধকের মৃত্যুর পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনের বাসনা পূরণ হয়-এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে। এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।
পাগলা মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছে এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে নাকি তাদের আশা পূরণ হয়েছে। এই বিশ্বাস থেকেই দূর-দূরান্তের মানুষও এখানে দান করতে ছুটে আসেন। মজার বিষয় হচ্ছে, দান সিন্দুক খুললে চিঠিপত্রও পাওয়া যায়। সেসব চিঠিতে দানকারীরা নিজেদের মনের বাসনার কথা লিখে দেন।
আরও পড়ুন: পাগলা মসজিদের কে সেই ‘পাগলা সাহেব’