শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

৫৫ কোটি টাকায় মুক্তি পেলো জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিক


সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক। ফাইল ছবি

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৪ এপ্রিল, ২০২৪ ১০:৩০ : পূর্বাহ্ণ

অবশেষে মুক্তিপণ দিয়েই সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে ৩২ দিন পর মুক্তি পেলো বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ ও এর ২৩ নাবিক।

গতকাল শনিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টাযর দিকে মুক্তিপণের ডলার ভর্তি তিনটি ব্যাগ জলদস্যুদের হাতে পৌঁছালে নাবিকসহ জাহাজটি ছেড়ে দেয় তারা।

জাহাজটি মুক্ত হওয়ার পরই সংযুক্ত আরব আমিরাতে আল হারমিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় এমভি আবদুল্লাহর দুই পাশে দুটি যুদ্ধজাহাজ পাহারা দিয়ে সোমালিয়া উপকূল ত্যাগ করতে থাকে।

‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজ উদ্ধারে কীভাবে মুক্তিপণের অর্থ সোমালিয়ান দস্যুদের হাতে পৌঁছেছে তা ডেকে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন নাবিকেরা। প্রত্যক্ষদর্শী এক নাবিক তার পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন, জাহাজের পাশে আগে থেকেই স্পিডবোটে করে অপেক্ষায় ছিল দস্যুরা। ছোট উড়োজাহাজ থেকে জাহাজের পাশে ডলারভর্তি ব্যাগ ফেলা হয়। ডলারভর্তি ব্যাগ পানি থেকে সংগ্রহ করে দস্যুরা। এরপর প্রায় আট ঘণ্টা পর গভীর রাতে দস্যুরা জাহাজটি ছেড়ে যায়।

শনিবার বিকেলে মুক্তিপণের অর্থ পেলেও দস্যুরা তাৎক্ষণিকভাবে জাহাজ থেকে নেমে যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, জলে-স্থলে নজরদারি এড়াতেই গভীর রাতে দস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যায়। মুক্তিপণের অর্থ পরিশোধের সময় জিম্মি জাহাজটির অদূরে ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ। আবার স্থলভাগে ছিল সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড পুলিশের টহল।

কত টাকা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত হলো এমভি আবদুল্লাহ ও এর ২৩ নাবিক?

এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি জাহাজের মালিকপক্ষের কেউ। তবে সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম বলছে, লেনদেন হওয়া মুক্তিপণের পরিমাণ ৫ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৫৫ কোটি টাকা!

সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড মিরর নামের সংবাদ মাধ্যম ডলারের এই অঙ্ক উল্লেখ করে ব্রেকিং নিউজ দিয়েছে।

বার্তা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দেওয়ার পর ছিনতাই হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও এর ২৩ জন ক্রুকে ছেড়ে দিয়েছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা।

আব্দি রাশিদ ইউসুফ নামে এক জলদস্যু রয়টার্সকে বলেছেন, দুই রাত আগে আমাদের কাছে টাকা আনা হয়েছে। টাকাগুলো জাল কিনা তা আমরা যাচাই করে দেখেছি। এরপর আমরা টাকাগুলো বিভিন্ন দলে ভাগ করে সরকারি বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে নিজেরা চলে যাই। জাহাজটির সব ক্রুকেও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

জলদস্যুদের সঙ্গে বোঝাপড়া চূড়ান্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছে কেএসআরএম গ্রুপের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত।

ফেসবুক পোস্টে শাহরিয়ার জাহান রাহাত উল্লেখ করেন, ‘সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ মুক্ত হয়েছে। নাবিকরা সবাই সুস্থ আছেন। শিগগির তারা দেশে ফিরবেন। ঈদ মোবারক। শুভ নববর্ষ।’ তবে পোস্টে মুক্তিপণের বিষয়টি উল্লেখ করেননি তিনি।

জাহাজের মালিকপক্ষের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানান, জাহাজটি মুক্ত করা হয়েছে। এটি এখন আরব আমিরাতের দিকে যাচ্ছে। সেখানে পণ্য খালাস করবে আর নাবিকরা দেশে ফিরে আসবে শিগগির।

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি কেএসআরএম গ্রুপের মালিকাধীন জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জিম্মি করেছিল সোমালিয়ার জলদস্যুরা।

এর আগে, ২০১০ সালে একই গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি জাহান মণি ছিনতাই হওয়ার তিন মাস পর মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছিল গ্রুপটি।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর