বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা ক্যাম্পাস রাজনীতি

ভিসির পা ধরে চাকরি চাইলেন ছাত্রলীগ নেতা


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক শিরীণ আখতারের পায়ে লুটিয়ে পড়েন ছাত্রলীগ নেতা মইনুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২৬ মার্চ, ২০২৪ ৭:০৩ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের পা ধরে চাকরি চেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মইনুল ইসলাম রাসেল। এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

গত ২০ মার্চ সকাল ৮টার দিকে শিরীণ আখতারের চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি লাইভলেন এলাকার বাসার নিচে এ ঘটনা ঘটে। সেদিন চবি উপাচার্য হিসেবে শেষ কর্মদিবসের দায়িত্ব পালন করতে সেসময় ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় সেখানে ছাত্রলীগের আরও কয়েকটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘চাকরির জন্য’ ছাত্রলীগ নেতা মইনুল ইসলাম রাসেল ভিসির পা ধরেছেন বলে ক্যাম্পাসে আলোচনা চলছে। তবে ছাত্রলীগের এই নেতা গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, চাকরির জন্য নয়, ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি চবি উপাচার্যের কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত বন্ধের অনুরোধ করতে তিনি ভিসির পা ধরেছিলেন।

ফুটেজে দেখা যায়, অধ্যাপক শিরীণ লিফটে করে বাসার নিচে নামলে চবি ছাত্রলীগের কয়েকটি গ্রুপের নেতা ভিসির পথরোধ করেন। এসময় চবি ছাত্রলীগের একাকার গ্রুপের নেতা মইনুল ইসলাম রাসেল চাকরির জন্য অধ্যাপক শিরীণের পায়ে পড়েন। একই সময়ে আরেক সহসভাপতি মুজিবর রহমানও পায়ে পড়েন।

ওই সময় সেখানে চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রলীগের আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে নীল রঙের গেঞ্জি পরিহিত ব্যক্তিটি ছাত্রলীগের ভিএক্স গ্রপের নেতা ও সাবেক সহসভাপতি রোমেল হোসেন এবং সাদা শার্ট পরিহিত ব্যক্তিটি একই গ্রুপের নেতা ও সাবেক সহসভাপতি মুজিবর রহমান।

মইনুল ইসলাম রাসেল পায়ে পড়লে তখন অধ্যাপক শিরীণকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা নাই। আমার পা ছাড়ো।’

এছাড়া তিনি তার বাসার নিচ থেকে চলে যেতে বলেন এবং পুলিশ ডাকবেন বলে জানান।

এরপর অধ্যাপক শিরীণ গাড়িতে উঠে গেলে মইনুল ইসলাম রাসেল ও তার সঙ্গী ছাত্রলীগ নেতারা ভিসির গাড়ির সামনে এসে পথরোধ করেন।

ভিসির পা ধরে চাকরি চাইলেন ছাত্রলীগ নেতা

অধ্যাপক শিরীণ যখন গাড়িতে উঠেন এবং গাড়িটি ড্রাইভওয়ের বাইরে যেতে শুরু করে, তখন ছাত্রলীগ নেতাদের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দুই মিনিটের জন্য তাদের কথা শোনার অনুরোধ করতে দেখা যায়। তবে শেষ পর্যন্ত অধ্যাপক শিরীণ গাড়ি থেকে না নেমে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।

এ ঘটনার আগের দিন ১৯ মার্চ অধ্যাপক শিরীণ কোনো সার্কুলার ও পরীক্ষা ছাড়াই চবিতে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে মোট ৩৭ জন কর্মচারী নিয়োগ দেন, যা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সারাদেশে ব্যাপক সমালোচিত হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মইনুল ইসলাম চাকরির জন্য অধ্যাপক শিরীণের পায়ে পড়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি চবি ভিসি অফিসে ভাঙচুরের ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত বন্ধের জন্য ভিসি ম্যাডামকে অনুরোধ করতে সেখানে গিয়েছিলাম। মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউটে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ভিসি অফিসে ভাঙচুরের একটি ঘটনা ঘটেছিল… চবি সিন্ডিকেট ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত একজন প্রার্থীকে নিয়োগ না দিয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়। তাই ছাত্রলীগের কর্মীরা তখন বিক্ষুব্ধ ছিল। পরে আমাকে ঘটনার প্রধান আসামি করা হয় এবং ৫৪১তম সিন্ডিকেট সভায় ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমি ভিসি ম্যাডামকে কয়েকবার অনুরোধ করেছিলাম অভিযোগ থেকে আমার নাম বাদ দিতে, কিন্তু তিনি তা করেননি। যেহেতু ভিসি হিসেবে এটি তার শেষ কর্মদিবস ছিল, আমি একই অনুরোধ নিয়ে তার বাসায় গিয়েছিলাম। আমি তাকে আমার বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম, কারণ এটি পরবর্তীতে আমার পেশাগত ক্যারিয়ারকে বাধাগ্রস্ত করবে।’

মইনুল জানান, অনুরোধ করার একপর্যায়ে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এবং অধ্যাপক শিরীণ অনুরোধে কর্ণপাত না করায় তার পায়ে পড়ে যান।

এ বিষয়ে চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘অধ্যাপক শিরীণের বাসায় যাওয়া মইনুল ও আরও দুজন আমার কমিটিতে চবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। তারা যা করেছে তা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। সাবেক ভিসি অধ্যাপক শিরীণ চবিতে নিয়োগের ব্যবসা খুলে বসেছিলেন, যা আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন অডিও ক্লিপের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এরই ধারাবাহিকতায় কিছু ছাত্রনেতা ভেবেছিলেন যে, এটি একটি সুযোগ যেভাবেই হোক একটা চাকরি বাগিয়ে নেওয়ার।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু ভিসি হিসেবে অধ্যাপক শিরীণের শেষ কার্যদিবস ছিল সেদিন, তাই মইনুল হয়তো ভেবেছিলেন এটাই শেষ সুযোগ এবং তাই তিনি মরিয়া হয়ে উপাচার্যের পায়ে পড়েন, যা একজন ছাত্রনেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তার জন্য লজ্জাজনক।’

মইনুলের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধের অনুরোধ নিয়ে অধ্যাপক শিরীণের বাসায় যাওয়ার দাবি সম্পর্কে রেজাউল বলেন, ‘এটা যদি সত্য হয়, তবে কেন তিনি অধ্যাপক শিরীণের শেষ কার্যদিবস বেছে নিলেন? তিনি তো এই ঘটনা ঘটার পর অনেক সময় পেয়েছিলেন ভিসিকে কনভিন্স করার। কেন এতদিন তিনি সেটা করেননি? কেন তাকে ভিসির শেষ কর্মদিবসকে বেছে নিতে হলো?’

তিনি বলেন, ‘মইনুল এরকম একটি লজ্জাজনক কাজ করে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।’

এ বিষয়ে জানতে অধ্যাপক শিরীণ আখতারের ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর