সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

জিম্মি জাহাজ নিয়ে কী হচ্ছে, নাবিকদের পরিবারে উদ্বেগ


আট দিন ধরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ।

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২০ মার্চ, ২০২৪ ১২:১১ : পূর্বাহ্ণ

সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিকের জিম্মি দশার আট দিন অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু জাহাজটি উদ্ধারের প্রক্রিয়া নিয়ে উভয় সংকট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

জাহাজ ও জিম্মি নাবিকদের জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত করতে সোমালি পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

কিন্তু অভিযান চালিয়ে জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধার তৎপরতাকে বিপজ্জনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকার ও মালিকপক্ষও অভিযানের বিপক্ষে।

এমভি আবদুল্লাহকে মুক্ত করতে অভিযান চালানো হতে পারে-এমন খবরে জাহাজটির নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন:

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে অভিযানের প্রস্তুতি

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে অভিযানের বিরোধিতা মালিকপক্ষের

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী বলেন, ‘জাহাজটি এখন সোমালিয়ার সীমানার মধ্যে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ভূমি থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সাগর ও আকাশপথ ওই দেশের অংশ। এক্ষেত্রে অভিযান চালাতে হলে সোমালি সরকারের অনুমতি লাগবে। এছাড়া আবদুল্লাহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারেরও অনুমতি নিতে হবে। তাছাড়া দস্যুদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান পরিচালনা হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ যদি অভিযানে ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাহলে এর দায় কে নেবে? বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত এ ধরনের অভিযানের অনুমতি দেয়নি। তাই আমার মনে হয়, অভিযানের বিষয়টি শুধু পরিকল্পনাতেই থাকবে। শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।’

এদিকে গত ১৬ মার্চ ভারতীয় নৌবাহিনীর সদস্যরা সোমালিয়ার দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে থাকা মাল্টার পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ এমভি রুয়েন উদ্ধার করেন। গত ডিসেম্বরে জলদস্যুরা ওই জাহাজ নিয়ন্ত্রণে নেয়। তাতে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ১৭ নাবিককে মুক্ত এবং ৩৫ জলদস্যুকে আটক করা হয়।

এরপর এমভি আব্দুল্লাহকেও উদ্ধারে সোমালি পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতির কথা গণমাধ্যমে আসে। এতে নড়েচড়ে বসে জাহাজ মালিকপক্ষ ও সরকার। এ ধরনের অভিযানকে বিপজ্জনক বলে জানিয়েছেন তারা। নৌ বিশেষজ্ঞরাও একই মত দিয়েছেন। দস্যুদের সঙ্গে যেকোনো উপায়ে সমঝোতাই জাহাজ ও জিম্মি মুক্তির একমাত্র উপায় বলছেন তারা।

এমভি রুয়েন আর এমভি আবদুল্লাহর অবস্থানগত প্রেক্ষাপট ভিন্ন উল্লেখ করে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী বলেন, ‘দুটো জাহাজকে একসঙ্গে মিলালে হবে না। রুয়েন নামের যে জাহাজটি উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি তিন মাস ধরে সোমালি উপকূলে ছিল। সেটা উপকূল থেকে সাড়ে ৩০০-৪০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। সেখানে কোনো জুরিসডিকশন ছিল না। এমভি আবদুল্লাহ সমতলের কাছাকাছি, প্রায় ৪ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে। এখানে সোমালি জলদস্যুদের শক্ত অবস্থান রয়েছে। এখানে বাইরের কেউ এসে অভিযান চালালে তা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’

জানা গেছে, এমভি আদুল্লাহর অয়েলার শামসুদ্দিন সোমবার রাত ৯টার দিকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় তিনি জানান, জলদস্যুরা আগের চেয়ে আরও কঠোর হয়েছে। কথা বলার সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন বলে পরিবারের সদস্যরা জানান।

এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের ভাই আসিফ নূর জানিয়েছেন, সর্বশেষ গত শনিবার আমার ভাইয়ের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কথা হয়েছে। তখন তিনি (আতিকুল্লাহ খান) জানিয়েছিলেন, জাহাজে কয়েকদিনের মধ্যে পানি ও খাবার সংকট দেখা দিতে পারে। এছাড়া জলদস্যুরা নাবিকদের চলাফেরায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে।

গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে চট্টগ্রামভিত্তিক কেএসআরএম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন এমভি আবদুল্লাহ।

সশস্ত্র জলদস্যুরা মাত্র ১৫ মিনিটে ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এরপর তারা জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যায়। জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়ার গারাকাড এলাকা থেকে উত্তর দিকে ৪৫-৫০ মাইল দূরে গদবজিরান উপকূলের কাছাকাছি রয়েছে।

মঙ্গলবার পর্যন্ত জাহাজটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান বা তৃতীয় কোনো পক্ষের সঙ্গে মুক্তিপণ নিয়ে যোগাযোগ করেনি জলদস্যুরা।

জাহাজ চলাচল ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময়ক্ষেপণ অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ, মুক্তিপণের পরিমাণ ঠিক করতে এবং পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে সময় প্রয়োজন দস্যুদের। এ জন্যই হয়তো যোগাযোগ করছে না।

এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর কেএসআরএম গ্রুপের আরেকটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। সেই জাহাজের নাম ‘এমভি জাহান মণি’। বড় অংকের মুক্তিপণের বিনিময়ে ১০০ দিনের মাথায় ওই জাহাজ থেকে মুক্তি পান ২৫ নাবিক।

আরও পড়ুন: 

জিম্মি জাহাজে অভিযানের অনুমতি চেয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন

সোমালি জলদস্যু কারা, কীভাবে তাদের উত্থান

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর