শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৭ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা জাতীয়

গোপন অডিও বার্তায় ঘটনার যে বর্ণনা দিলেন জিম্মি জাহাজের চিফ অফিসার


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৩ মার্চ, ২০২৪ ১১:০৮ : পূর্বাহ্ণ
জলদস্যুরা বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামের জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এটিকে সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
Rajnitisangbad Facebook Page

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুরা বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামের জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এটিকে আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই গোপনে জাহাজ মালিকের কাছে এক অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান। ৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের ওই অডিও বার্তায় জলদস্যুদের কবলে পড়ার পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে জানিয়েছেন জাহাজ ও তাদের বর্তমান পরিস্থিতিও।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিলো। জলদস্যুদের কবলে পড়া চট্টগ্রামের কেএসআরএম গ্রুপের এই জাহাজটি পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী সংস্থা এসআর শিপিং লিমিটেড। জাহাজে চিফ অফিসার আতিকউল্লাহসহ ২৩ বাংলাদেশি নাবিক রয়েছেন।

আতিক উল্লার বাড়ি চন্দনাইশের বরকল এলাকায়। মা, স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি থাকেন শহরের নন্দনকানন এলাকায়।

অডিও বার্তায় আতিক উল্লাহ খান বলেন, সময় তখন সকাল সাড়ে ১০টা। বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টা। ওই সময় একটা হাই স্পিডবোট আমাদের দিকে আসতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে আল্যার্ম দিই। আমরা সবাই ব্রিজে গেলাম। তখন ক্যাপ্টেন স্যার আর জাহাজের দ্বিতীয় কর্মকর্তা ব্রিজে ছিলেন। আমরা এসওএস (জীবন বাঁচানোর জরুরি বার্তা) করলাম। ইউকে এমটিওতে (যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন) যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তারা ফোন রিসিভ করেনি। এরপর ওরা চলে এল। তারা ক্যাপ্টেন স্যার ও দ্বিতীয় কর্মকর্তাকে ঘিরে ফেললো। আমাদের ডাকলো। আমরা সবাই এলাম। এ সময় কিছু গোলাগুলি করল। সবাই ভয় পেয়েছিলাম। সবাই ব্রিজে বসে ছিল। কারও গায়ে হাত দেয়নি। শুধু সেকেন্ড অফিসারকে একটু মারধর করেছে।

জাহাজটির চিফ অফিসার বলেন, এ সময় একটা স্পিডবোটে আরও ১৫ থেকে ২০ জন চলে আসে। কতক্ষণ পর একটি বড় ফিশিং ভেসেল এল। ওটা ছিল ইরানের মালিকানাধীন মাছ ধরার জাহাজ, যেটিকে এক মাস আগে তারা জিম্মি করেছিল। মাছ ধরার জাহাজটি দিয়ে তারা সাগরে জাহাজ খুঁজছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সামনে পড়ে গেলাম। এই ফিশিং বোটের তেল শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের জাহাজে থাকা পাম্প দিয়ে কিছু ডিজেল নিয়ে ওই বোটে দিয়েছে তারা। তেল দেওয়ার পর আমাদের জাহাজে উঠে জিম্মি করা ফিশিং বোটটিকে ছেড়ে দেয়।

আতিক উল্লাহ খান বলেন, তারপর ওরা আমাদের সেকেন্ড ও থার্ড অফিসারকে নিয়ে জাহাজের ইঞ্জিন রুমে যায়। তাদের নিয়ে গিয়ে জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়। এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে কারো কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জাহাজের কোনো ক্ষতি হয়নি। আমাদেরও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে সবাই ভয়ে আছি। ওরা খুব ভয় দেখাচ্ছে।

জাহাজটির চিফ অফিসার বলেন, আমাদের জাহাজে ২০-২৫ দিনের খাবার পানি আছে। প্রায় ২০০ মেট্রিক টনের মতো। সবাইকে বলেছি, এগুলো একটু সাবধানে ব্যবহার করতে। শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়ব আমরা। তবে, একটা সমস্যা হচ্ছে আমাদের জাহাজে কিছু কোল্ড কার্গো আছে। প্রায় ৫৫ হাজার টন। এগুলো একটু ডেঞ্জারাসও। ফায়ারেরও ঝুঁকি আছে। মিথেন বাড়ে। লাস্ট যখন অক্সিজেন মেপেছি তখন ৯-১০ শতাংশ লেভেল পেয়েছি। এটি নিয়মিত মনিটরিং করতে হয়। কোনো কারণে অক্সিজেন লেভেল বেড়ে গেলে বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে হবে। এটার একটু ব্যবস্থা করবেন, স্যার।

আরও পড়ুন: সোমালিয়ার দস্যুদের কবলে বাংলাদেশি জাহাজ, জিম্মি ২৩ নাবিক

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর