রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৩ মার্চ, ২০২৪ ৭:০২ : অপরাহ্ণ
দুদকের করা অর্থ আত্মসাতের মামলায় জামিন পেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘একজন নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের এই অভিযোগ একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।’
তিনি বলেন, ‘এই বিচারের ঘটনা এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, দেশের মধ্যেও সীমাবদ্ধ নয়, সারা দুনিয়ার মানুষ লক্ষ্য করছে এই বিচারে কী হচ্ছে। আমরা যা যা করছি তা সবই তারা দেখছে।’
আজ রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত থেকে জামিন পেয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের বটতলায় আমরা সবাই। এটা ঐতিহাসিক একটা ছবি। এটা আজকে-কালকে পত্রপত্রিকায় বের হবে। কিন্তু এটা যুগ যুগ ধরে নানা বইতে প্রকাশিত হবে। আপনারা সেই ইতিহাসের সাক্ষী।’
এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখ করে নোবেল বিজয়ী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘একজন নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনেছে, জালিয়াতির অভিযোগ এনেছে, মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ এনেছে। আমি একা নই। আমরা আরও ৭ জন, যারা সারাজীবন কঠোর পরিশ্রম করেছে গরীব মানুষের জন্য। এরা কোন চাকরি করতে এখানে আসে নাই। তারাও অর্থ আত্মসাত, জালিয়াতির এবং মানি লন্ডারিংয়ের জন্য অভিযুক্ত।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ‘এই যে ঘটনাগুলো ঘটছে তার পক্ষে লিখুন, বিপক্ষে লিখুন কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু এটা রেকর্ডেড। জাতির ইতিহাসের একটা অংশ হয়ে যাবে। এটার জন্য কি আমরা গর্ববোধ করবো, নাকি অপরাধবোধ করবো? এরকম একটা সন্তানকে এমন অপরাধে অপরাধী কেনো করলাম? এগুলোর জবাব থেকে মুক্তি নাই।’
নোবেল বিজয়ী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আপনারা আজকে এখানে উপস্থিত আছেন। আপনারা জন্ম-জন্মান্তর ধরে বলতে পারবেন যে, আমরা উপস্থিত ছিলাম সেখানে। কেনো ছিলেন, কী হয়েছে সেগুলো আপনারা বর্ণনা করবেন। এটা আমার মুখ থেকে শোনার দরকার নেই। আপনারা যা নিজে মনে করবেন তা আপনার পরের প্রজন্মকে জানাবেন। আগের প্রজন্মকে জানাবেন। যারা এখানে উপস্থিত হয়নি তাদের জানাবেন।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আইন মানুষের শুভ কামনা করে রচনা করা হয়। আইন মানুষের মনে স্বস্তি আনে, শান্তি আনে। আইন মানুষের মনে আশঙ্কাও জাগায়। ভয়ংকর শঙ্কা জাগায়। আইনকে আমরা কোনদিকে নিয়ে যাবো সেটা সমাজের ইচ্ছা। সমাজ কীভাবে করতে চায়। আপনারাও ঠিক করেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আজ যে বিচারে বসলো সেটা সঠিক কারণে হয়েছে কিনা, সঠিকভাবে হয়েছে কিনা। এটা আমার মুখের দিকে তাকানোর কোনো দরকার নাই। এটা আপনার মনে যা জাগে তাই করবেন।’
নোবেল বিজয়ী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা এগুলো স্কুলে পড়বে। যখন নোবেল পুরস্কারের কথা হবে, তখন বলা হবে উনার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের দায়ে, জালিয়াতির দায়ে…তারা কনফিউজড হয়ে যাবে যে, আসলটা কী। তারা বলবে, এটা কি মুখোশ, আসল মানুষটা কে? সে আবার একা না, তার সাঙ্গপাঙ্গও আছে। কাজেই, আমরা যে আজ এখানে উপস্থিত হয়েছি, এটা এখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, দেশের মধ্যেও সীমাবদ্ধ নয়। সারা দুনিয়া জুড়ে লক্ষ্য করছে যে, এ বিচারের কী হলো। আমরা যা যা করছি, তারা সবিস্তারে এটা দেখছে।’
শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় আজ নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সাতজনকে জামিন দেন আদালত।
আরও পড়ুন:
দুদকের মামলায় জামিন পেলেন ড. ইউনূস
তারা আমাকে জেলে পাঠাতে পারেন: ড. ইউনূস
ড. ইউনূসের মামলা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে জাতিসংঘ