বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ২৮ কার্তিক, ১৪৩১ | ১০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা ধর্ম

পবিত্র শবে বরাতে বিদআতের কী আছে?


পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ।

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১১:০৩ : পূর্বাহ্ণ

পবিত্র শবে বরাত আজ। হাদিস শরিফে এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য রজনী’ বলা হয়েছে। পবিত্র রমজানের আগের মাস শাবানের ১৪ তারিখ দিনগত রাত ‘শবে বরাত’ বা ‘সৌভাগ্যের রজনী’ নামে প্রসিদ্ধ।

মহিমান্বিত এই রাতে আল্লাহর সান্নিধ্য ও ক্ষমালাভে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার, মিলাদ মাহফিল, নফল নামাজ আদায় ও কোরআন তিলাওয়াতে মশগুল থাকেন। অনেকে মৃত স্বজনের কবর জিয়ারত করেন।

পবিত্র শবে বরাত নিয়ে প্রচুর গবেষণা ও পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত রয়েছে। এক শ্রেণির আলেম শবে বরাতকে ‘বিদআত’ মনে করেন।

কিন্তু শবে বরাত কি বিদআত?

সম্প্রতি এক মাহফিলে পবিত্র শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা করেছেন দেশের খ্যাতনামা শিল্পগ্রুপ পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ।

পবিত্র শবে বরাত কতটা ফজিলতপূর্ণ তা নিয়ে তিনি একটি গল্প তুলে ধরেন-

এক বৃদ্ধ খুব অসুস্থ। বলা যায়, মৃত্যু শয্যায়। কঠিন সময়ে সন্তান-সন্ততি, নাতি-নাতকর তাকে ঘিরে আছেন। একসময় সবাই বুঝতে পারছেন সাকারাতের (বিদায়) সময় শুরু হয়ে গেছে।

ওই সময় বৃদ্ধ তার সন্তানদের দিকে তাকিয়ে বলছে, লেবু, লেবু, লেবু। সন্তানরা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। এ অবস্থায় আব্বা কি লেবুর শরবত চাচ্ছেন? নাকি একটু লেবুর গন্ধ শুকতে চাচ্ছেন? বুঝতে পারছি না!

এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয়ে গেলো। সন্তানরা বাবার দাফন-কাফন করলেন। এরপর চারদিনের ফাতেহা শরীফ করলেন। সেখানে আগত অতিথিদের সবাইকে লেবু কেটে খাওয়ানো হলো। অতিথিদের যাওয়ার সময়ও প্রত্যেককে লেবু দেওয়া হলো। সন্তানদের ধারণা, মৃত্যুর সময় বাবা হয়তো একটু লেবু চেয়েছিলেন কিন্তু আমরা দিতে পারিনি।

কিছু দিন পরে সন্তানরা চিন্তা করলেন, বাবার এই বাড়িটা তো অনেক পুরনো হয়ে গেছে। আমরা বাড়িটা ডেভেলপারদের কাছে বিক্রি করে দিই। আমরা নতুন বাড়িতে গিয়ে থাকি। সেই অনুযায়ী তারা বাড়িটা ডেভেলপারদের কাছে হস্তান্তর করে চলে যান। ডেভেলপার নতুন বাড়ি করার জন্য পুরনো বাড়িটা ভেঙ্গে ফেললেন। এরপর শক্ত গাঁথুনি করার জন্য মাটির নিচে পরিস্কার করতে গেলেন। একপর্যায়ে তারা দেখলেন, মাটির নিচে একটা বড় বাক্স। তালা ভেঙ্গ দেখলো, সেখানে হীরা-রুপা-পান্না-জহরত ভর্তি। ডেভেলপার খুশি হয়ে গেলেন এবং বললেন, আমার আর বাড়ি বানানোর দরকার নেই। যে হীরা-জহরত পেয়েছি, বাকি জীবন আমার আর চৌদ্দ গোষ্ঠীর কেটে যাবে।

এখন যারা বাড়িটা বিক্রি করেছিলেন, তারা খবর পেলেন যে, বাড়ির মাটির নিচে অনেক হীরা-জহরত পাওয়া গেছে। তারা সবাই বাড়িটাতে এসে দাবি করলেন, এই হীরা-জহরতের মালিক আমরা। তাদের এই ঝগড়া আদালত পর্যন্ত গড়ালো। আদালত সবকিছু বিবেচনা করে রায় দিলেন, যেহেতু বাড়ির মালিক সবকিছু স্বত্ব ত্যাগ করে বাড়িটা ডেভেলপারের কাছে হস্তান্তর করেছেন, তাই হীরা-জহরতের মালিক হবে ডেভেলপার।

এ ঘটনার পর ওই বৃদ্ধের নাতি চিন্তা করলো, আমরা ভুল কোথায় করলাম? আমার দাদা এতো হীরা-জহরত রেখে গেলেন, কিন্তু আমাদেরকে মৃত্যুকালে বলে গেলেন না কেন? স্বাভাবিকভাবে পিতা চায়, সন্তান ও নাতি-নাতিকর তার সম্পদের মালিক হোক। যা আমাদের সমাজের চিরাচরিত নিয়ম। ওই নাতি পুরনো বাড়িটাতে গিয়ে জানতে চাইলো, হীরা-জহরতের বাক্সটা কোথায় পাওয়া গেছে? খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলো, ওদের বাড়িতে একটা লেবুর গাছ ছিলো। এই লেবু গাছের নিচে হীরা-জহরতের বাক্সটা ছিল!

তখন নাতি চিন্তা করলো, আহ! কতবার এই লেবু গাছের নিচে খেললাম, লেবু ছিঁড়ে খেলাম। আর বাবা-মা কতবার এই লেবু গাছের পাশে হাঁটাচলা করেছেন। আমার দাদা মনে হয়, এজন্যই মৃত্যুর সময় লেবু, লেবু, লেবু বলেছিলেন। আমরা আমার দাদার সেই ইশারাটা একটু খেয়াল করলাম না! আমরা যদি সেই ইশারাটাকে গুরুত্ব দিতাম, তাহলে আজকে সব হীরা-জহরত আমাদের হতো।

নিসফি শাবান হলো ওই লেবুর গাছ! যে লেবু গাছের নিচে যে রাতের ভেতরে পাপ মোচনের হীরা, রুটি রিজিকের জহরত, রোগ মুক্তির মুক্তা এবং দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াবির যত নেয়ামত দরকার সবকিছু আল্লাহ দিয়ে রেখেছেন। আমাদেরকে ইশারা করা হয়েছে কিন্তু খোঁজার দায়িত্ব, বুঝার দায়িত্ব আমাদের সবার। কারণ আল্লাহ আমাদের আকল দিয়ে তৈরি করেছেন। সমঝদার কে লিয়ে ইশারাই কাফি।

আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, নামাজ পড়লে, নফল নামাজ পড়লে, দান-সদকাহ করলে, কবর জিয়ারত করলে, মানুষকে খাওয়ালে কি সওয়াব নাকি গুনাহ? যারা শবে বরাত পালন করেন তারা এই রাতে এর বাইরে কি কিছু করেন? যদি না করে থাকে, তাহলে এখানে বিদআতের কী আছে?

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর