‘কী দেখে বলবেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি’-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কড়া ভাষায় বলেছেন, ‘আপনার ভোট জালিয়াতির তথ্য আপনার দলের নেতারাই সংবাদ সম্মেলন করে জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। গতকাল (রোববার) তারাও আপনার সামনে বসেছিলেন। আপনার বক্তব্য শুনে তারা হয়তো লজ্জা পেয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘যারা অপরাধ করে তারা নিজেদের নিরপরাধ ভাবে। আপনাদেরকে ভারত যে ক্ষমতায় বসিয়েছে, সেটি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিয়েছেন। মিথ্যার তাস দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না।’
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘নির্বাচনে জালিয়াতির সবচেয়ে বড় প্রমাণ আপনি নিজেই। কারণ আপনার নিয়োগকৃত নির্বাচন কমিশনের সচিব নিজেই বলেছেন যে, যারা জিতবে ডিসিদের কাছে তাদের তালিকা আগেই দেওয়া আছে, ঘোষণা দিয়ে দিলেই বাসায় গিয়ে ঘুমাতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনার জালিয়াতির নির্বাচনের প্রমাণ কেবল আন্তর্জাতিকভাবেই উত্থাপিত হয়নি, দেশেও এর অসংখ্য প্রমাণ আছে। শুধু তাই নয়, শূন্য ভোটকেন্দ্রে ছবি এবং ভিডিওই শুধু দেখা যায়নি, বিভিন্ন আসন থেকে প্রার্থীরা জালিয়াতি হচ্ছে বলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’
রিজভী বলেন, ‘৭ জানুয়ারি নির্বাচন যদি অবাধ-সুষ্ঠু হয়, তাহলে আপনার নিয়োগকৃত প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন যে, তার কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্ট ছাড়া আর কাউকেও দেখা যায়নি। এরপরেও আপনি ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কোন মুখে কথা বলেন। আপনি সত্যকে বস্তাবন্দী করে রাখতে সবচেয়ে বেশি দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।’
আরও পড়ুন: কী দেখে বলবেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, প্রশ্ন শেখ হাসিনার
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, ‘গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার পরেও বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল নির্বাচনের ভিডিও ফুটেজসহ নানা অনিয়ম তুলে ধরেছে। ১০ বছরের শিশুর ভোট দেওয়া, কেন্দ্র দখল করে গণহারে সিল মারা এবং তারা নির্বাচনের পূর্বাপর নিজেরা নিজেরা খুনোখুনি, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ভাঙচুরের অসংখ্য ভিডিও ও স্থিরচিত্র ভাইরাল হয়েছে এবং গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। ভোটারবিহীন শূন্য ভোটকেন্দ্র তো সারাদিন দৃশ্যমান হয়েছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। জনগণ এই ভোট সর্বান্তকরণে বর্জন করেছেন।’
রিজভী প্রশ্ন করেন, ‘বিরোধী দলের ওপর চরম ক্র্যাকডাউন চালিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আপনি বন্দী করেছেন কী উদ্দেশে সেটি কি দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানে না?’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, ‘‘কারাগারে রাজবন্দীদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের মতো দস্যুদের মতো পরিবেশে তৈরি করার উদ্দেশ্য ছিল ‘আমরা আর মামুদের’ একতরফা নির্বাচন। আর সেটি বাস্তবায়ন করতে আপনি যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বিরোধী দলের মিছিল—সমাবেশে হামলা চালিয়ে, গুলি করে, মানুষ হত্যা করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ রাজনৈতিক নেতাদের কারাগারে নিক্ষেপ করে নিষ্ঠুরভাবে দমন-পীড়ন চালিয়েছেন তা আপনার দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক প্রকাশ্যেই বলে দিয়েছেন। সেটাকে খণ্ডন করবেন কীভাবে?’’