রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১০:৪১ : পূর্বাহ্ণ
মিয়ানমারের মাগওয়ে অঞ্চলে সামরিক জান্তাবিরোধী দুই বিদ্রোহী যোদ্ধাকে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে প্রায় তিন মাস আগে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি এ নৃশংস অপরাধের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় মিয়ানমারে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
মিয়ানমারের অনলাইন দ্য ইরাবতী এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, বয়স ২০–এর কোঠায় দুই তরুণ যোদ্ধাকে প্রথমে একটি গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাদের শরীরে আগুন ধরিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
আগুনে পোড়ানোর আগে দুই যুবককে স্বীকার করতে বাধ্য করা হয় যে, তারা স্থানীয় পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) সদস্য। সেনাবাহিনী তাদের মুখ দিয়ে স্বীকার করতে বাধ্য করে যে, তারা ‘কুকুর’।
যারা তাদেরকে এই স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে তার মধ্যে কিছু সদস্য ছিল সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরা। অন্যরা ছিল সাদা পোশাকে। তাদেরকে ঘটনার সময় ওই দুই যুবককে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। উল্লেখ্য, বহু বেসামরিক ব্যক্তি সামরিক জান্তার সেনাদেরকে বোঝাতে ‘মিলিটারি ডগস’ শব্দের ব্যবহার করেন।
এই ভিডিওর বিষয়ে প্রথমে রিপোর্ট করে স্থানীয় দুটি মিডিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, ভিডিওটি তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জীবন্ত পুড়িয়ে মারার আগে তাদের নির্যাতন করা হয়েছে বলে ভিডিওতে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের গুরুতর জখম এবং রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়। ওই তরুণদের হাতে পায়ে লোহার শিকল বেঁধে একটি গাছের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। নিজেদের কুকুর বলে সম্বোধন করতে বাধ্য করার পর তাদের গাছ থেকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। এরপর গায়ে জ্বালানি তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। জনসম্মুখেই তাদের জীবন্ত পোড়ানো হয়।
ভিডিওটিতে একটি আনন্দিত কণ্ঠে এই অপরাধকে ‘বিজয়’ হিসেবে উপস্থাপন করে বর্ণনা করা হয়েছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইয়াও ডিফেন্স ফোর্স (ওয়াইডিএফ) নিহত ওই দুই তরুণকে ফো তে এবং থার হাতুং বলে শনাক্ত করেছে। তারা ওয়াইডিএফ সদস্য ছিলেন। তাদেরকে ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর মিয়াউক খিন ইয়ান গ্রামে একটি অভিযানের সময় জান্তা সেনা এবং পিউ সো হতি সদস্যরা আটক করে। গ্রামের প্রতিটি পরিবারকে দুই তরুণের ফাঁসির সাক্ষী থাকার জন্য একজন করে সদস্যকে পাঠাতে বলা হয়েছিল।
ওয়াইডিএফ বলেছে, গাঙ্গাও শহরের মায়ুক খিন ইয়ান গ্রামে জান্তা সেনা ও তাদের মিত্র পিউ সো হতি মিলিশিয়া সদস্যরা এই ঘটনার জন্য দায়ী। ওই গ্রামটি নিয়ন্ত্রণ করছে পিউ শয়ে হতি মিলিশিয়ারা। তাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন সামরিক বাহিনী সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির সাবেক আইনপ্রণেতা বুলেট হ্লা শয়ি। বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে নৃশংস নির্যাতন চালানোর জন্য কুখ্যাত এই মিলিশিয়ারা। তারা গ্রামে গ্রামে গোলা নিক্ষেপ করে। ২০২২ সালের মার্চে একই গ্রামের দু’জন সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। পিউ সো হতি মিলিশিয়াদের বিস্তৃতির কারণে গ্রামের অনেক বাসিন্দাই পালিয়ে গেছে।
নির্যাতন ও জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বহু ব্যবহারকারী ক্ষোভ ও বেদনা প্রকাশ করছেন।
অনেকেই লিখেছেন, এই রকম অমানবিক কর্মকাণ্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার পরিবর্তে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে শুধুই বিপ্লবী উদ্দীপনাকে উজ্জীবিত করবে। এক্ষেত্রে কেউ কেউ সামরিক জান্তাবিরোধী প্রতিরোধ গ্রুপ এবং জাতিগত সশস্ত্র গ্রুপের আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে সামরিক জান্তার নৃশংস আচরণের তুলনা করছেন।
ওয়াইডিএফ বলেছে, ‘বহুদিন আগে থেকেই সেনাবাহিনী অমানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আর এমন ঘটনা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করার একটিই উপায় আছে। তা হলো, ক্ষমতা থেকে সেনাবাহিনীর শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে বিপ্লবের সফলতা।