রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ১২:৪১ : অপরাহ্ণ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহী মোহাম্মদ রইস উদ্দীনকে ‘নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের’ ঘটনা জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিএনপির এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই দাবি তোলা হয় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২১ জানুয়ারি ভোরে যশোর সীমান্তের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট-সংলগ্ন এলাকায় বিএসএফ সদস্যরা বিজিবি সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইস উদ্দীনকে গুলি করে হত্যা করে। সারা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সবচেয়ে সহিংস ও রক্তস্নাত। ভারত কতৃর্ক বারবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকদেরকে হত্যার ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়তই প্রাণহানির সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে গণমাধ্যমে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে ৭ বছরে ২০১ জন বাংলাদেশি নাগরিক বিএসএফ এর গুলিতে নিহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: যশোর সীমান্তে বিজিবি সদস্যকে গুলি করে মারলো বিএসএফ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, সিপাহী মোহাম্মদ রইস উদ্দীনকে গুলি করে হত্যার পর বিএসএফের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য। বিএসএফের পক্ষ থেকে বলা হয় ‘তিনি (নিহত ব্যক্তি) বিজিবির সদস্য তা তারা বুঝতেই পারেনি, তিনি লুঙ্গি ও টিশার্ট পরে ছিলেন এবং পাচারকারী দলের সঙ্গে তাকে ভারতের সীমানার ভিতরে দেখা গিয়েছিল। একজন বিজিবি সদস্য কিভাবে লুঙ্গি আর টিশার্ট পরে পাচারকারী দলের সঙ্গে মিশে থাকতে পারেন সেটি তাদের (বিএনপি) বোধগম্য নয়। এই বয়ান শুধু বানোয়াটই নয়, ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের ‘বিগ ব্রাদার’ সুলভ গরীমা থেকে উৎসাহিত হয়ে বিএসএফ তাদের হত্যাকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গাইছে। একজন বিজিবি সদস্য কখনোই লুঙ্গি ও টিশার্ট পরে পাচারকারী দলের সঙ্গে থাকতে পারেন না।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিএসএফের মন্তব্যের সঙ্গে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’ও দ্বিমত পোষণ করেছে। বিএসএফের এমন আচরণের ইতিহাস যুগপৎ হিংসাশ্রয়ী ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, বরাবরই বিএসএফের কৃত অপরাধকর্ম এবং বয়ানের মধ্যে দুস্তর ব্যবধান থাকে। তাদের আচরণে মনে হয় তারা আদিম ও মধ্যযুগ পেরোতে পারেনি। মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে হত্যা করার পর তাদের মনগড়া বয়ানকে বাংলাদেশের মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। এই মর্মস্পর্শী হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশ জুড়েই ক্ষোভ ও বিক্ষোভে আলোড়িত। জ্বলে উঠেছে বাংলাদেশ। ভারতের উচ্চাকাঙ্খী নীতির কারণেই সীমান্তে রক্তপাত থামছে না। বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাকে ‘ব্লাড-স্পোর্ট’ বা রক্তক্ষয়ী খেলায় পরিণত করেছে। বাংলাদেশের মানুষকে নতজানু রাখার এটি একটি আধিপত্যবাদী বার্তা।
বিবৃতিতে বলা হয়, এতোদিন বিএসএফের হাতে সাধারণ বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। আর এখন সীমান্তে বিজিবিরও নিরাপত্তা নেই। অন্য দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আরেকটা স্বাধীন দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী হত্যা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, বরং এটির সঙ্গে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত। এটি গভীর উদ্বেগের বিষয় যে, শেখ হাসিনার ক্ষমতা লোভের ফলশ্রুতিতে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশকে আজ তাঁবেদার রাষ্ট্র বানানো হয়েছে। দখলদার আওয়ামী সরকার আজ দেশবিরোধী ঘৃণ্য চক্রান্তের ক্রীড়নক। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি-কেও এখন বেঘোরে প্রাণ দিতে হচ্ছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, বিএসএফের ‘ডেলিবারেট কিলিং’ এখন সর্বজনবিদিত। নিয়ন্ত্রণহীন এসব হত্যাকাণ্ডের আশকারা দেয়া দিল্লীর উগ্রতা আর ঢাকার নীরবতা। শেখ হাসিনা দিল্লীর সঙ্গে অধীনতামূলক চিরস্থায়ী ‘রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ এর ফলশ্রুতি হচ্ছে বিএসএফ কতৃর্ক সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যার ঘটনায় নিশ্চুপ থাকা। মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে হত্যার ঘটনা পরের দিন পর্যন্ত জানতেই পারেননি বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাবিলাসী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নাগরিকদের জীবনের চেয়ে দখলদার আওয়ামী মন্ত্রীদের ক্ষমতা খুব জরুরি। দেশবাসীকে পরাধীন রেখে ক্ষমতা ভোগ করাই আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শ। স্বভূমির সীমানায় কাউকে শান্তিতে রাখেনি আওয়ামী সরকার। এখন তাদের বন্ধুপ্রতীম দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে দিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক এবং সীমান্তরক্ষীদের প্রাণ সংহার করা হচ্ছে। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ হলেও তাদের নীতি নির্ধারকদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গভীরতা অর্জিত হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, সেজন্যই বাংলাদেশ সীমান্তে বেআইনি হত্যাকাণ্ডে তারা কোন দায়বোধ করে না। ফেলানীসহ সকল হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক মহল এমনকি ভারতের বেশকিছু মানবাধিকার সংগঠন প্রতিবাদ-উদ্বেগ-উৎকন্ঠা প্রকাশ করলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এর কোন বিচার বা প্রতিকার করেনি। কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর হৃদয়বিদারক লাশের দৃশ্য দেখে বাংলাদেশের মানুষের মনে এখনও ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি। পাশাপাশি নিহত ব্যক্তির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।