রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৮ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা জাতীয় পার্টি

সমঝোতা করেও জাতীয় পার্টির ভরাডুবি


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ৯:৩৯ : পূর্বাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) ভরাডুবি হয়েছে। জোটসঙ্গী আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬টি আসনে সমঝোতা করেও মাত্র ১১টিতে জয় পেয়েছে লাঙ্গল। ছাড়ের আসনের ১১টি বাদে আর কোথাও জিততে পারেনি জাতীয় পার্টি। এমনকি সমঝোতার ১৫টি আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছে লাঙ্গল।

জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরসহ অন্তত চারজনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে সমঝোতার আসনে। এ ছাড়া নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ২৩৩ আসনের অধিকাংশে জামানত হারিয়েছেন লাঙ্গলের প্রার্থীরা।

জি এম কাদের বলেছেন, ‘নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে কোরবানি দেওয়া হয়েছে।’

ফলে আগামী সংসদে আর দ্বিতীয় বৃহত্তম দল থাকছে না জাপা। লাঙ্গলের চেয়ে স্বতন্ত্রের এমপি বেশি হবে দ্বাদশ সংসদে। ফলে জাপা আবার বিরোধী দল হতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

অবশ্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রতিদিনই দাবি করতেন, আওয়ামী লীগকে হারিয়ে সরকার গঠন করবে তার দল।

১১টি আসনে যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন-রংপুর-৩ আসনে জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের), কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে পার্টির বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, কুড়িগ্রাম-১ আসনে এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, সাতক্ষীরা-২ আসনে মো. আশরাজুজ্জামান আশু, পটুয়াখালী-১ আসনে সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, বরিশাল-৩ আসনে গোলাম কিবরিয়া টিপু, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এ কে এম সেলিম ওসমান, ফেনী-৩ আসনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৫ আসনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং বগুড়া-২ আসনে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ।

আওয়ামী লীগের ছাড় দেওয়া আসনে জাপার যেসব প্রার্থীরা ব্যর্থ হয়েছেন তারা হলেন—নীলফামারী-৩ আসনের রানা মোহাম্মদ সোহেল, নীলফামারী-৪ আসনের আহসান আদেলুর রহমান, রংপুর-১ আসনের মকবুল শাহরিয়ার, কুড়িগ্রাম-২ আসনের পনির উদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-১ আসনের শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গাইবান্ধা-২ আসনের মো. আব্দুর রশিদ সরকার, বগুড়া-৩ আসনের মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার, পিরোজপুর-৩ আসনে মো. মাশরেকুল আজম (রবি), ময়মনসিংহ-৫ আসনে সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ-৮ আসনে ফখরুল ইমাম, মানিকগঞ্জ-১ আসনে জাপার জহিরুল আলম রুবেল, ঢাকা-১৮ আসনে শেরীফা কাদের, হবিগঞ্জ-১ আসনে মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মো. আব্দুল হামিদ এবং চট্টগ্রাম-৮ আসনে সোলায়মান আলম শেঠ।

এসব প্রার্থীর মধ্যে বিশেষ করে ফখরুল ইমাম, পনির উদ্দিন আহমেদ, শেরীফা কাদের ও শামীম হায়দার পাটোয়ারীর ভোটে জিততে না পারাকে বড় ধরনের ব্যর্থতা বলে মনে করছে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বছরের পর বছর সমঝোতার রাজনীতি করতে গিয়ে নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা ধ্বংস করে দেওয়ার ফলেই এমন ভয়াবহ ভরাডুবির শিকার হতে হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীদের একাংশ।

এর আগে নানা নাটকীয়তার পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬টি আসনে সমঝোতা করে জাতীয় পার্টি। ওই আসনগুলো থেকে নৌকা সরিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ। তবে এসব আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন জাপা প্রার্থীরা।

জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রথম নির্বাচনি জোট হয় ২০০৮ সালে। ওই নির্বাচনে মহাজোট সঙ্গী জাতীয় পার্টিকে ৩২ আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। আর উন্মুক্ত ১৭টি আসন উভয় দলের প্রার্থীরা নিজ নিজ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০ আসনে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ১৩টি আসনে বিজয়ী হন।

এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয় ২৯টি আসন। তারা শেষ পর্যন্ত ২২টি আসনে জয়লাভ করে সংসদে বিরোধী দল হয়ে ওঠে। এবারে ১১টি আসন দিয়ে জাতীয় পার্টি কেমন বিরোধী দল হবে, সেটিই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন:

আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ, কে কোন আসনে নির্বাচিত

নৌকায় উঠেও ডুবলেন জাসদের ইনু

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর