রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ৭:৩০ : পূর্বাহ্ণ
বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে আজ রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট। ২৯৯টি আসনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।
বিএনপিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করলেও ২৮টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে আছেন ৪৩৬ জন। রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্রসহ মোট নারী প্রার্থী ৯০ জন।
নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করে ইসি। ফলে ২৯৯ আসনে ভোট হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি প্রথমে ২৯৯ আসনে প্রার্থী দেবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু সমঝোতার ভিত্তিতে পরে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এছাড়া, তাদের ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও জেপিকে (মঞ্জু) ৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৬৬ জন, জাতীয় পার্টির ২৬৫, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ১৩৫ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৬৬ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৩ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১০ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীর বাইরে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেয় আওয়ামী লীগ। যেসব আসনে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার বেশিরভাগ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৯ হাজার ৭৪১ ও নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯। এছাড়া সারাদেশে এবার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৪৯ জন। মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ২৪টি।
চিরবৈরী বিএনপি ভোট বর্জন করায় আওয়ামী লীগই যে ভোটে জিতে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় যাচ্ছে, তা প্রায় নিশ্চিত।
আরও পড়ুন: অসুস্থ গণতন্ত্রের দেশে একপক্ষীয় নির্বাচন
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ভোটারদের আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ভাষনে এবারের নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: এবারের নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না: সিইসি
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে প্রাণহানি, ভোটকেন্দ্রে আগুন, ক্যাম্প ভাঙচুর, প্রতিপক্ষের প্রার্থী-কর্মী-সমর্থকের ওপর হামলার মতো সহিংস ঘটনা ঘটছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রে ভোটার টানা একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও দেশবাসী তাকিয়ে আছে আজকের ভোট কেমন হয়, সেটি দেখার অপেক্ষায়।
ভোটের মাঠে না থাকলেও সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে তারা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে।
এবারই প্রথমবারের মতো ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। শুধু দুর্গম অঞ্চলের ২ হাজার ৯৬৪টি কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো হয় ভোটের আগের দিন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আছেন স্থানীয় ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষক। এছাড়া প্রায় দুই শতাধিক বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকছেন বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের সহযোগী হিসেবে গত ৩ জানুয়ারি থেকে দেশের ৬২ জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা ও বরগুনা এবং ১৯ উপজেলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
এর আগে, গত ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর, যাচাই-বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর, আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার সময়য় ছিল। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৮ ডিসেম্বর। ১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয় এবং শেষ হয় গত শুক্রবার সকাল ৮টায়।