রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১০:২১ : অপরাহ্ণ
মেহেরপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান এক সরকারি কর্মকর্তাকে হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, ‘মনে রাখতে হবে, আমি শেখ হাসিনার প্রার্থী, আমি ভারতের প্রার্থী। আমি এখানে হারার জন্য আসিনি।’
গত ১৭ ডিসেম্বর আব্দুল মান্নান মেহেরপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অলোক কুমার দাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথোপকথনের সময় এসব কথা বলেন। তাদের এক মিনিট পাঁচ সেকেন্ডের কথোপকথন ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফোনে ডা. অলোক কুমার দাসকে হুমকি দিয়ে প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেন, ‘তুমি বাইরে থেকে এসে মেহেরপুরে খুব আরামেই আছো। টাকা-পয়সা অনেক কামাই করছো। বাড়ি-ঘর করেছো। আমি যদি আর একটা কথা শুনি মন্ত্রীকে (প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন) ভোট দেওয়ার ব্যাপারে, আমি এমপি হই, আর না হই, তোমার মেহেরপুরের বাসা আমি উঠিয়ে দেবো। আর যদি তুমি সাবধান হয়ে যাও তাহলে আমার প্রিয় পাত্র হয়ে থাকতে পারবে। এটুকু আমি তোমাকে বললাম। পারলে তোমার মন্ত্রীকে বলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি শেখ হাসিনার প্রার্থী, আমি ভারতের প্রার্থী, এটি তোমাকে মনে রাখতে হবে। আমি এখানে হারার জন্য আসিনি। সাবধান হয়ে যাও তুমি। আমি তোমার কোনো কথা শুনবো না। আমি যে রিপোর্ট পেয়েছি, আমি খুব অসন্তুষ্ট তোমার প্রতি, তুমি সাবধান হয়ে যাও।’
এ বিষয়ে ডা. অলোক কুমার দাশ বলেন, ‘গত ১৭ ডিসেম্বর প্রফেসর আব্দুল মান্নানের কাছ থেকে আমার ফোনে একটি কল আসে। তিনি ফোনে আমাকে হুমকি দেন। তবে বিষয়টি সাধারণ ঘটনা বলে মনে করি। আমার ফোনে অটো কল রেকর্ডিং হয়। আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ। শান্তিতে থাকতে চাই। এ কারণে কাউকে অভিযোগ জানাইনি। আমি শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থী জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে বিষয়টি জানিয়েছি। কারণ তিনি (ফরহাদ) আমার অভিভাবক।’
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে অলোক কুমার দাশ সারাদিন প্রতিমন্ত্রীর বাসায় বসে থাকেন। তিনি নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে এবং নিজের চেম্বার প্রাকটিসকালে রোগীদের নৌকায় ভোট দান করতে বলে বেড়াচ্ছেন। বলছেন নৌকায় ভোট না দিলে চিকিৎসা দেবেন না। গ্রামের মানুষজন, ভোটাররা অসংখ্যবার ডা. অলোকের এই কাণ্ড আমাকে জানায়। এ কারণে অলোককে বোঝানোর জন্য আমি ফোন দিয়েছিলাম। এটি উভয়ের পারসোনাল প্রোপার্টি ছিল। কিন্তু এটি সামাজিক মাধ্যমে বিকৃত আকারে ছড়ানো হয়েছে। প্রতিপক্ষ প্রার্থী আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এ কাজ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘মূলত বলেছি আমি ভারতের প্রার্থী না। অথচ ‘না’ শব্দটি কেটে ফেলা হয়েছে। এখন এই ইস্যুটি পুঁজি করে প্রতিপক্ষ প্রার্থী জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী আমাকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে প্রকাশ্য নির্বাচনী সভায় বক্তব্যে দিয়ে বেড়াচ্ছেন।’
এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মেহেরপুর-১ আসনের নৌকা প্রার্থী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘প্রফেসর আব্দুল মান্নান যেটি করেছেন তা নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন। উনি সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হয়ে এমন কথা বলতে পারেন না। আর উনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রার্থী দাবি করে যে কথা বলেছেন সেটা মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই না। আমি বিষয়টি নিয়ে রির্টানিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক জেলা রির্টানিং অফিসার শামিম হাসান বলেন, ‘আমি বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি জেনে তা নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির প্রধান যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ কবির হোসেনকে জানিয়েছি। তারা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’