রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১০:০২ : অপরাহ্ণ
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার গণতান্ত্রিক বিশ্বকে বিভ্রান্ত করতে জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়ের মতো আগামী ৭ জানুয়ারির ভাগবাটোয়ারার নির্বাচনের প্রাক্কালে এই জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করা হতে পারে।
আজ শুক্রবার বিকেলে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ, এ দেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু উগ্র নয়। অসংখ্য ছেলেমেয়ে ইসলাম ধর্মের শিক্ষা গ্রহণের জন্য কওমি, আলিয়া, সুন্নি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। এই পর্যন্ত মাদ্রাসায় কোনো ধরনের উশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড কিংবা সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী, ছাত্রলীগ সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলো চর দখলের মতো দখল করে রেখেছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ফেসবুকে ভারতবিরোধী লেখার জন্য বুয়েটের ছাত্র আবরারকে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের ওপর বারবার হামলা হয়েছে। অথচ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রকৃত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করছে না। উল্টো পার্শ্ববর্তী দেশের নির্দেশনায় জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করে সাধারণ জনগণের মৌলিক অধিকার-ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে পড়েছে। শুধু ফ্যাসিস্ট রক্তপিপাসু সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে আলেম ওলামাদের বহির্বিশ্বে জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, একদল উচ্চ শিক্ষিত, তথাকথিত আত্ম ও ব্যক্তিত্ব বিক্রি করা বুদ্ধিজীবী ব্যস্ত আছেন নির্বাচনে নৌকা জিতবে কত আসনে সেই হিসাব নিয়ে। প্রশাসন ব্যস্ত পাতানো নির্বাচনের কৌশল নিয়ে। মাফিয়া চক্রের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ব্যস্ত শেখ হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) হাতে জিম্মি জনগণের এই মহাবিপদের সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কিভাবে বাড়ানো যায় সেই কৌশল নিয়ে। আর জনগণ লড়াই করছে জীবন বাঁচানোর যুদ্ধে। এর মধ্যে ধেয়ে আসছে প্রলয়ংকরী বিপর্যয়। বেপরোয়া ও নজিরবিহীন আওয়ামী লুটপাটে ধ্বংস হয়ে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ৯ বিলিয়ন ডলারে নিচে।
সংবাদপত্রের উদ্বৃতি দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দেশের রির্জাভ ক্রমেই কমে আসছে। এখন তলানিতে। এ অবস্থায় কার্যত দেউলিয়াত্ব ঘোষণার অপেক্ষা মাত্র। সারা দেশে ধাবিত হচ্ছে নিশ্চিত ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির দিকে। লুটপাট ও দুর্নীতি করে ব্যাংকিং সেক্টর ফোকলা করে দিয়েছে আওয়ামী লুটেরা গোষ্ঠি। টাকার ঘাটতির কারণে দেশের শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের আর্থিক লেনদেন সেবা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার কয়েকটি ব্যাংকের চলতি হিসাবের ঋণাত্মক স্থিতি সমন্বয়ের জন্য ২০ দিনের সময় বেধে দিয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বর্তমানে অসহনীয় মূল্যস্ফীতি, নজিরবিহীন ডলার সংকট, ডলারের বিনিময়ে টাকার অভূতপূর্ব অবমূল্যায়ন, ব্যাংকিং ও আর্থিক অব্যবস্থাপনা, অপরিণামদর্শী ভ্রান্ত নীতি, অদক্ষ ও দলকানা নীতি বৈষম্য, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচার, ঋণ প্রাপ্তির অপর্যাপ্ততা, সুশাসনের অভাব, সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আয় বৈষম্য এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রহীনতা বর্তমান অর্থনৈতিক নৈরাজ্যে দেশ ও জনগনের মরণদশা। অর্থ পাচার করে বিদেশে গাড়ি বাড়ি ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। সিঙ্গাপুরসহ দেশে দেশে শ্রেষ্ঠ ধনীর তালিকাভুক্ত হচ্ছে। দেশে-বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছে। আর অন্যদিকে গরিব আরও গরিব হচ্ছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে।
জনগণকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাষ্ট্রীয় অর্থের বিনিময়ে খরিদ করা ‘কিংস পার্টি’, ভূঁইফোড়, তৃণভোজী, ডামি ও খুঁদকুঁড়ো পার্টির কথিত নির্বাচনি নাটক মঞ্চস্থ করার তামাশায় কেউ কোনো প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন না। ভোট কেন্দ্র্রে যাবেন না। ভোট দেবেন না। ‘আমরা আর মামুরা’ মার্কা এই নির্বাচনের প্রার্থী বা তাদের পক্ষভুক্তদের সংশর্ব ত্যাগ করুন। বিএনপি বা অঙ্গসংঠনের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের সঙ্গে কোনোভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সারাদেশে ৮০ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। এই সময়ে ৪ মামলায় ৪৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।