বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা স্বাস্থ্য

বিড়াল পাললে দ্বিগুণ হয় সিজোফ্রেনিয়া রোগের ঝুঁকি



রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১১:০৭ : পূর্বাহ্ণ

বিশ্বজুড়েই বিড়াল পালন নিয়ে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বিপুলসংখ্যক মানুষ বিড়াল পালেন। কিন্তু এবার বিড়ালপ্রেমীদের জন্য দুঃসংবাদ নিয়ে এসেছেন একদল গবেষক।

তাদের গবেষণা বলছে, যারা বিড়াল পালেন তাদের অন্যদের তুলনায় সিজোফ্রেনিয়া রোগের (মানসিক রোগ) ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ বিষয়ক গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হয়েছে সিজোফ্রেনিয়া বুলেটিন জার্নালে।

গবেষণাটি চালিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড সেন্টার ফর মেন্টাল হেলথ রিসার্চের গবেষকেরা। বিগত ৪৪ বছরে এ সংক্রান্ত ১৭টি গবেষণার বিশ্লেষণ থেকে তারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। এই ১৭টি গবেষণা চালানো হয়েছিল যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বে কয়েকটি দেশে।

বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স অ্যালার্টের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে গবেষক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জন ম্যাকগ্রা ও তাঁর সহযোগীরা লিখেছেন, ‘আমরা বিস্তৃতভাবে সংজ্ঞায়িত বিড়ালের মালিকানা ও সিজোফ্রেনিয়া-সম্পর্কিত রোগের বিকাশের ঝুঁকির মধ্যে একটি সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছি।’

বিড়ালেরে লালন-পালনের সঙ্গে সিজোফ্রেনিয়া ঝুঁকি থাকতে পারে এই বিষয়টি সামনে আসে ১৯৯৫ সালের একটি গবেষণায়। কারণ হিসেবে সেই গবেষণায় বলা হয়েছিল, টক্সোপ্লাজমা গন্ডি নামক একটি পরজীবীর বিড়ালের মাধ্যমে মানুষে স্থানান্তরিত হওয়ার কারণে এই ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু বর্তমান গবেষণা বলছেন ভিন্ন কথা।

নতুন এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, শৈশবে বিড়ালের আশপাশে বেশি থাকার ফলে ব্যক্তির সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তবে যে ১৭টি গবেষণা নিয়ে গবেষকেরা কাজ করেছেন, তার সবগুলোতেই একই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি।

তবে অধিকাংশ গবেষণায় একটি বিষয় সাধারণ ছিল। সেটি হলো-বিড়ালের কারণে সিজোফ্রেনিয়া সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যগুলো বাড়তে পারে। তবে এখানে মাত্রার তারতম্য ঘটতে পারে। বিষয়টি নিয়ে অধিকতর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষক ম্যাকগ্রা ও তাঁর সহযোগীরা।

টক্সোপ্লাজমা গন্ডি হলো-একটি নিরীহ পরজীবী যা অল্প রান্না করা মাংস বা দূষিত পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে। সংক্রমিত বিড়ালের কামড় বা মল থেকেও এটি ছড়াতে পারে। গবেষকেরা বলছেন, টক্সোপ্লাজমা গন্ডি একবার আমাদের দেহের ভেতরে প্রবেশ করলে তা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রেও অনুপ্রবেশ করতে পারে এবং নিউরোট্রান্সমিটারগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে। এভাবে পরজীবীটি মানুষের ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন, বিভিন্ন মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ এমনকি সিজোফ্রেনিয়াসহ বেশ কিছু স্নায়বিক রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তবে একমাত্র বিড়াল থেকেই মানুষের দেহে টক্সোপ্লাজমা গন্ডি প্রবেশ করে এসব পরিবর্তন ঘটনায় এ বিষয়ে নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। তবে ১৭টি গবেষণার পর্যালোচনা থেকে দেখা গেছে, বিস্তৃতভাবে সংজ্ঞায়িত বিড়ালের মালিকানা ও সিজোফ্রেনিয়া সংশ্লিষ্ট রোগের ঝুঁকির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে।

গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি যে, বিড়ালের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ।’

নতুন এই গবেষণার বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন, আগেই বলা হয়েছে-যে ১৭টি গবেষণা নিয়ে এখানে পর্যালোচনা করা হয়েছে তার বেশ কয়েকটিতে বিড়াল পালনের সঙ্গে সিজোফ্রেনিয়ার সরাসরি সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে অধিকাংশ গবেষণায়ই পাওয়া গেছে এই সংযোগ।

আবার এসব গবেষণায় স্যাম্পলের পরিমাণ ছিল বেশ কম। তাই গবেষকেরা বলছেন, এ বিষয়ে আরও জানতে অধিকতর গবেষণা প্রয়োজন।

সিজোফ্রেনিয়া কী?
সিজোফ্রেনিয়া হলো এক ধরনের জটিল মানসিক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বাস্তব চিন্তা একদম কমে যায়, বিভ্রম বা হ্যালুসিনেশন হয়, গায়েবি আওয়াজ শুনতে পায়, যা ঘটেনি বা যা নেই এমন জিনিসে বিশ্বাস করে। এটি মূলত সাইকোটিক ডিজঅর্ডার। এ রোগীরা মানতে চায় না যে তারা কোনো রোগে ভুগছে। এ জন্য কোনো চিকিৎসকের কাছেও তারা যায় না।

সিজোফ্রেনিক রোগীরা দিন দিন একা হয়ে যায়। যার কারণে তাদের আচার-আচরণেও ব্যাপক পরিবর্তন চলে আসে। তাদের নিজেদের মন, চিন্তাশক্তি, অনুভূতি বা ইচ্ছেশক্তি কোনো কিছুতেই তার নিয়ন্ত্রণ থাকে না। যেমন- হাসির কোনো কারণ ছাড়া রোগী হয়তো একাই হাসে, কানে আওয়াজ শুনে বিড়বিড় করে কথা বলে। এসবের পরও রোগী কখনো ভাবে না সে সিজোফ্রেনিয়ায় ভুগছে। সে পুরোপুরি তার নিজের আলাদা কাল্পনিক জগত তৈরি করে নেয়। এই দুনিয়াই তার পুরো জীবনকে প্রভাবিত করে।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর