রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ৬:০১ : অপরাহ্ণ
গত ২ নভেম্বর সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘ তো নামকাওয়াস্তে। তাদের কথা কেউ শোনে? বাস্তবে জাতিসংঘের কোনো কার্যকারিতা নেই।’
ওবায়দুল কাদের জাতিসংঘের কড়া সমালোচনা করার পর সংস্থাটির দ্বারস্থ হলেন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। বাংলাদেশের ওপর অযৌক্তিক চাপের অভিযোগ তুলে জাতিসংঘকে ভূমিকা রাখতে চিঠি দিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘের মহাসচিবের শেফ দ্য ক্যাবিনেট আর্ল কোর্টনে র্যাট্রকে গত মাসে এই চিঠি দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের পক্ষ থেকে এই চিঠিটি মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের নির্বাহী কার্যালয়েও পাঠানো হয়।
ড. আবদুল মোমেন এই চিঠি পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি জানান, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সময় র্যাট্রের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয় এবং বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর তিনি এই চিঠি পাঠান।
জাতিসংঘকে বাংলাদেশের একজন মন্ত্রীর এই চিঠিটি এমন সময় সামনে এলো যখন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্যাংশনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্ব থেকে বাংলাদেশকে বারবার সুষ্ঠু, অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গণতন্ত্রের একজন ক্রুসেডার এবং তিনি দেশের মানুষের ভোট, খাদ্য ও সুন্দর জীবনযাপনের অধিকার নিশ্চিত করতে অনেক কষ্ট করেছেন।’
চিঠিতে লেখা হয়, ‘শেখ হাসিনা একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু একইসঙ্গে বিক্ষোভের নামে সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি পোড়ানো ও মানুষকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনাগুলো তিনি সহ্য করবেন না, যা বিরোধী দল নিয়মিত করে আসছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিঠিতে লিখেন, ‘বাংলাদেশ গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও মানুষের সম্মান রক্ষায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে। তা স্বত্বেও আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ বিভিন্ন মহলের কাছ থেকে অযাচিত, অযৌক্তিক ও আরোপিত রাজনৈতিক চাপের মুখোমুখি হচ্ছে।’
জাতিসংঘকে আহ্বান জানিয়ে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা আশা করবো জাতিসংঘ ও তার সেক্রেটারিয়েট, সংস্থা ও স্থানীয় কার্যালয়গুলো বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যেতে গঠনমূলক ও সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের একটি উদ্যমী ও সহযোগিতামূলক মনোভাবসম্পন্ন সদস্য রাষ্ট্র। আমরা প্রবলভাবে আশাবাদী যে, জাতিসংঘ বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রগতি ও জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সহযোগিতা ও সহায়তা অব্যাহত রাখবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আশাবাদী যে, জাতিসংঘ ও তার সব অঙ্গসংগঠন ও সংস্থা জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রগতিশীল ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য অংশীদারের ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।’
আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা আরও প্রত্যাশা করব যে, জাতিসংঘের কর্মকর্তারা পক্ষপাতহীনতা, সততা ও বস্তুনিষ্ঠতার সর্বোচ্চ মানদণ্ড মেনে চলে সংস্থাটির গ্রহণযোগ্যতা ও সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখবে। যদি তাদের প্রতিবেদনগুলোতে ভুল তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠতার অভাব থাকে এবং এগুলো যদি উপাত্ত-নির্ভর না হয়, তাহলে তারা তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারাতে পারে, যা সংস্থাটির সামগ্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি এক অশনিসংকেত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।’
এ ছাড়া, জাতিসংঘের মহাসচিব ও সহকারী মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকজন বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ ও পেশাদারকে নিয়োগ দেওয়ার আহ্বানও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।