রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :৩০ নভেম্বর, ২০২৩ ৯:৪৮ : অপরাহ্ণ
ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে একের পর এক বিতর্কিত কাণ্ড করে চলেছেন চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এবার তার আক্রমণের শিকার হয়েছেন সাংবাদিক।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান এমপি মোস্তাফিজ। এ সময় ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের একজন প্রতিবেদক আচরণবিধি নিয়ে এমপি মোস্তাফিজকে প্রশ্ন করলে তিনি তার উপর চড়াও হন। এ সময় তিনি ওই সাংবাদিককে থাপ্পড় দিয়ে শার্টের কলার ধরেন। এ সময় তার সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। তারা একজন সাংবাদিকের মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে আঁছড়ে ফেলেন। ট্রাইপড ভাঙচুর করেন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করেন।
এমপি মোস্তাফিজের এমন ঔদ্ধত্য আচরণে চট্টগ্রামের সাংবাদিক মহলে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
ভুক্তভোগী ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিবেদক রাকিব উদ্দিন জানান, আচরণবিধি না মেনে পাঁচজনের বেশি লোক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়া নিয়ে এমপি মোস্তাফিজকে প্রশ্ন করলে তিনি ক্ষেপে গিয়ে আমাদের ওপর চড়াও হন।
এ ঘটনার পর পর সাংবাদিকরা রিটার্নিং অফিসার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানকে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিলে তিনি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এরপর বিকেলে ঘটনাটি তদন্ত করতে নির্বাচন কমিশন থেকে চট্টগ্রাম যুগ্ম জেলা জজ আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ইতোমধ্যে কয়েকজন ভুক্তভোগী সাংবাদিক থেকে জবানবন্দি নিয়েছেন।
এমপি মোস্তাফিজের ক্ষমতার দাপট এটাই প্রথম নয়। এর আগেও নানা বিতর্কিত কাণ্ড ঘটিয়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি।
গত ২২ মে বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজশাহীর বিএনপি নেতা আবু সাইদ চাঁদের হত্যার হুমকির প্রতিবাদে বাঁশখালী সদরে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলে পিস্তল হাতে সবার সামনে ছিলেন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। পিস্তল হাতে এমপির ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।
আরও পড়ুন: পিস্তল হাতে মিছিলের নেতৃত্বে এমপি মোস্তাফিজ, জনমনে আতঙ্ক
২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এমপি মোস্তাফিজের গালাগালির একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন মোস্তাফিজ।
২০১৮ সালে পটিয়ায় এক জনসভায় মুক্তিযুদ্ধে তিন লাখ শহীদ হয়েছে বলে সাত মিনিট বক্তব্য রাখেন মোস্তাফিজ, যা নিয়ে তখন মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।
২০১৬ সালের ১ জুন দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পছন্দের নির্বাচনী কর্মকর্তা না দেওয়ায় জাহিদুল ইসলাম নামে এক নির্বাচনী কর্মকর্তাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে মারধর করেছিলেন এমপি মোস্তাফিজ।
এক সময় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনেও এই বিতর্কিত ও সমালোচিত নেতাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।