বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ২০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬

মূলপাতা আন্তর্জাতিক

ইসরায়েল-হামাস বন্দিবিনিময় শুরু, আনন্দের বন্যা



রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক
প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ

কাতারের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চারদিনের যুদ্ধবিরতি চলছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলে বন্দি ও গাজায় হামাসের হাতে জিম্মিদের বেশ কয়েকজনকে উভয় পক্ষ মুক্তি দিয়েছে।

বন্দিবিনিময়ের অধীনে ইসরায়েল মুক্তি দিয়েছে ৩৯ ফিলিস্তিনিকে। অন্যদিকে ১৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস।

এ ছাড়া গাজা থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে আরও ১০ জন থাই এবং একজন ফিলিপিনো নাগরিককে। থাই ও ফিলিপিনো নাগরিকরা শুক্রবার মুক্তি পাওয়ার পর দেশের পথে যাত্রা করার কথা।

ওদিকে ফিলিস্তিনি বন্দি এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির পর সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোতে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের কারাগারে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বহুদিন আটক ছিলেন ফিলিস্তিনি বন্দিরা।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তারা হত্যাচেষ্টা করেছেন বলে ইসরায়েলের দাবি। আটক বন্দিদের বিরুদ্ধে নির্মম নিষ্ঠুরতা চালানোর অভিযোগ আছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে।

পক্ষান্তরে ইসরায়েলি জিম্মিরা এ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহারের অভিযোগ করেনি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে বলা হয়েছে, শনিবার যেসব জিম্মিকে গাজার যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাস মুক্তি দেবে তার একটি তালিকা তারা পেয়েছে।

যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয়দিন শনিবার। শুক্রবার দিবাগত রাতে কোনো হামলা হয়নি গাজায়। ফলে গাজাবাসী প্রায় দুই মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো একটি উদ্বেগহীন রাত কাটিয়েছেন। এ রাতে তারা স্বস্তি নিয়ে ঘুমাতে গেছেন। তবে যে চারদিনের যুদ্ধবিরতি চলছে, তার ভবিষ্যত নিয়ে তারা সন্দিহান।

এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৪,৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে হামাসের রকেট হামলায় ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা ১২০০।

বিবিসি বলছে, ইসরায়েল যে ৩৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে তার মধ্যে আছেন ২৪ জন নারী ও ১৫টি টিনেজ বালক। তাদেরকে দখলীকৃত পশ্চিমতীরের বেইতুনিয়া চেকপয়েন্ট দিয়ে মুক্তি দেয়া হয়। নারী এবং কম বয়সীদের ৩০০ জন বন্দির একটি তালিকা দিয়েছিল ইসরায়েল।

সেখান থেকে বাছাই করে এসব বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে এক চতুর্থাংশেরও কম অভিযুক্ত হয়েছেন। বেশির ভাগই বিচারের অপেক্ষায় ছিলেন। তাদেরকে রিমান্ডে রাখা হয়েছিল। মুক্তি পাওয়া টিনেজ বালকদের মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগের বয়স ১৮ বছরের নিচে। একটি টিনেজ বালিকাও মুক্তি পেয়েছে।

মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিদের স্বাগত জানাতে রামাল্লাহর কাছে বেইতুনিয়া চেকপয়েন্টে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলেন ফিলিস্তিনি পুরুষ ও বালকদের একটি গ্রুপ। কিন্তু তাদেরকে সেখানে দাঁড়াতে দেয়নি ইসরায়েলি সেনারা। তাদেরকে পিছু হটতে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়।

ফলে ওই এলাকা কাঁদানে গ্যাসে অন্ধকার হয়ে ওঠে। এ সময় কিছু যুবক সেনাদের বিরুদ্ধে ইটপাথর এবং কাঁদানে গ্যাসের ক্যানিস্টার ছুড়তে থাকে। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ খতিব নামে একজন বলেছেন, ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে এটা এক আশার লক্ষণ। তা হলো এই যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে এবং বন্ধ হবে হত্যাযজ্ঞ।

ওদিকে বন্দিদের মুক্তি দেয়ার পর তাদেরকে বাসে করে পরিবহন করা হয়। বাসটি গিয়ে উল্লসিত এক সাগর ফিলিস্তিনি সমর্থকদের থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে গিয়ে থামে। ফিরে আসা স্বজন এবং অপেক্ষারত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দেখা দেয় এক আনন্দ উৎসব।

বাসের জানালা দিয়ে দেখা যায় কোনো কোনো বন্দি বাসের ভিতরেই নাচছেন। একজন ফিলিস্তিনি পতাকা দোলাচ্ছেন। আর বাইরে মোবাইল ফোন উঁচু করে অনেকে গ্লাসের ভিতর দিয়ে তাদের ছবি তোলার চেষ্টা করছিলেন।

এ সময় তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে উল্লসিত জনতা ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিতে থাকে। তাদের মধ্য থেকে অল্প কয়েকজন হামাসের দলীয় পতাকা উড়ান।

অন্যরা ফিলিস্তিনি একতার কথা বলেন। তারা দখলদার ইসরায়েলিদের ভিকটিমে পরিণত হয়েছিলেন। অন্যদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে হামাস মুক্তি দিয়েছে ১৩ ইসরাইলি জিম্মিকে। শুক্রবারই তারা নিশ্চিত করেছে যে, এসব জিম্মি ইসরায়েলে পৌঁছেছে।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর