শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪ | ২০ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৩ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা খেলা

মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি ছাপিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার দুরন্ত জয়


স্পোর্টস ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৪ অক্টোবর, ২০২৩ ১০:৩৯ : অপরাহ্ণ
সাকিবকে ফিরিয়ে উইলিয়ামসের উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত
Rajnitisangbad Facebook Page

ব্যাটিং স্বর্গে এসে রান না করলে কি চলে? রানের উইকেট পেলে যে কোনো ক্রিকেটারই তা লুফে নেবে এটাই তো স্বাভাবিক। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারটা সেটাই করেছেন।

ওয়াংখেড়ের ছোট মাঠে রীতিমতো রানের উৎসব করলেন কুইন্টন ডি কক-হেনরিখ ক্লাসেনরা। সাকিব-মুস্তাফিজদের তুলোধুনো করে গড়েন রানের পাহাড়। যা টপকে জেতা তো দূরে নূন্যতম প্রতিরোধও গড়তে পারেনি বাংলাদেশ।

পুরো দলের ব্যর্থতার দিনে শুধু লড়াই করেছেন মাহমুদউল্লাহ। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। কিন্তু তার সেঞ্চুরি ছাপিয়ে বড় জয় মাঠ ছাড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।

বিশ্বকাপে আজ মঙ্গলবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৮২ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ থেমে যায় মাত্র ২৩৩ রানে।

পুরো বিশ্বকাপে একবারও ৩০০ না ছোঁয়া বাংলাদেশের সামনে ৩৮৩ রান তাড়া করা ছিল এভারেস্ট বিজয়ের সমান। অথচ রান তার চূড়ায় ওঠা তো দূরে বাংলাদেশ ভেঙে পড়ে অল্পতেই।

যদিও বড় রান তাড়ায় শুরুটা একটু দেখেশুনে করে। কিন্তু থিতু হয়েও টিকল না ওপেনিং জুটি। দলীয় ৩০ রানের মাথায় তানজিদ তামিমের বিদায়ে ভাঙে প্রথম জুটি। মার্কো ইয়ানসেনের বলে ক্লাসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১২ রানে ফেরেন তামিম।

একই ওভারে বিদায় নেন নাজমুল শান্ত। ধারাবাহিক ব্যর্থ হওয়া শান্ত ফেরেন গোল্ডেন ডাকে। চরম বিপদে হাল ধরতে পারেননি সাকিবও। তার ইনিংস থেমে যায় ১ রানে।

মিডল অর্ডারের প্রাণভোমরা মুশফিকুর রহিমও টিকে থাকতে পারেননি। জেরাল্ড কুটসিয়ার অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল কাট করে ছক্কা মারার চেষ্টায় থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন মুশফিক (৮)।

৪২ রানে দ্রুত উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন ধুঁকছিল তখন ভরসা ছিল লিটন দাসের ওপর। কিন্তু এবারও ব্যর্থ তিনি। ২২ রান করে রাবাদার এলবির ফাঁদে পড়েন এই ডানহাতি ব্যাটার।

উইকেটে থিতু হলেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ।

৮১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশের হয়ে একাই লড়াই চালান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সপ্তম উইকেট জুটিতে নাসুম আহমেদকে সঙ্গী করে ৪১ রানের জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ।

তিন চারে ১৯ বলে ১৯ রান করে নাসুম আউট হলে ভাঙে এই জুটি। তবে ৮ম উইকেটে হাসান মাহমুদকে সঙ্গী করে ফের লড়াই চালান মাহমুদউল্লাহ। ৬৭ বলে তুলে নেন চলতি আসরের প্রথম ফিফটি।

নবম উইকেট জুটিতে মোস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪র্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাহমুদউল্লাহ। ১১১ বলে তার সেঞ্চুরি সাজানো ছিল ১১ চার ও ৪ ছক্কায়।

শতকের পর অবশ্য বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তিনি। ১১১ রান করে কোয়েৎজির বলে লং অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পথে দক্ষিণ আফ্রিকানদের অভিনন্দনও পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ।

মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি ছাপিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার দুরন্ত জয়

একা হাতে লড়াই যেটিকে বলে, আজ সেটিই করেছেন আজ অভিজ্ঞ ব্যাটার। তিনি ফেরার পর দক্ষিণ আফ্রিকার এই ম্যাচ শেষ করতে লেগেছে ৬ বল। শেষ ব্যাটার হিসেবে ১১ রানে ফেরেন মুস্তাফিজুর।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বেশ সাবধানে করে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে উইকেটের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেকে।

সপ্তম ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি পেসারের ডেলিভারিটি ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন হেনড্রিকস। কিন্তু লাইনে যেতে পারেননি। বল গিয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে। ৩৩ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি। হেনড্রিকস করেন ১৯ বলে ১২ রান।

দ্বিতীয় জুটিও স্থায়ী হয়নি। জ্বলে উঠার আগেই বিপদজনক ফন ডার ডুসেনকে ১ রানে এলবির ফাঁদে ফেলেন মিরাজ।

শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার জোড়া উইকেট নেবার স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি বাংলাদেশের। বরং বাংলাদেশের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠেন কুইন্টন ডি কক ও এইডেন মার্করাম। তৃতীয় উইকেটে দুজন মিলে গড়েন ১৩১ রানে শক্ত জুটি।

ফিফটি তুলে নিয়ে বোলারদের ওপর চড়াও হতে শুরু করেছিলেন মার্করাম। চড়াও হতে গিয়ে ৬৯ বলে ৬০ করে সাকিবের বলে লং অফে লিটনকে ক্যাচ দিয়ে থামেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।

মার্করামের পর ক্লাসেনকে নিয়ে জুটি বাধেন কুইন্টন। তুলে নেন নিজের সেঞ্চুরি। সাকিবের বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে যান ডি কক। ১০১ বলে চার ছক্কা ও ছয় চারে সেঞ্চুরি করেন তিনি।

সেঞ্চুরি করেই দেশের হয়ে অনন্য রেকর্ড গড়লেন ডি কক, প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে এক বিশ্বকাপে করলেন তিন সেঞ্চুরির রেকর্ড।

সেঞ্চুরির পর আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন ডি কক। ছুটতে থাকেন ক্লাসেনকে নিয়ে। ১০১ বলে সেঞ্চুরি করা ডি কক পরের ২৮ বলে করেন ১৫০।

সাকিবদের রীতিমতো তুলোধুনো করে শেষ পর্যন্ত ১৭৪ রানে থামেন ডি কক। হাসান মাহমুদের ফুলটসে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিলেন নাসুম আহমেদকে। ফেরার আগে ১৪০ বলে ১৫ চার ও ৭ ছক্কায় সাজানো ছিল তার ইনিংস।

ডি কক থাকতেই ঝড় শুরু করেছিলেন ক্লাসেন, ৩৪ বলে তুলে নেন ফিফটি। ডি কক ফেরার পর ঝড়ের গতি আরও বাড়ান ক্লাসেন, হাতছানি ছিল বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরি করারও।

৪৯ বলে ৯০ করে হাসান মাহমুদের বলে অবশেষে থামেন ক্লাসেন। শুধু ছক্কাই মেরেছেন ৮টি, চার মাত্র ২টি! ক্লাসেন ফেরার পর ১৫ বলে ৩৪ রান করে বাংলাদেশের কাজ আরও কঠিন করে তোলেন ডেভিড মিলার।

বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে সমান একটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান, শরিফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ। শুধু হাসান মাহমুদ নেন দুটি উইকেট।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর